হুমায়ন কবির মিরাজ, বেনাপোল:
যশোরের শার্শা উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। টানা বর্ষণ ও ভারতের ইছামতি নদীর উজানের ঢলে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দুই হাজারের বেশি পরিবার চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে মারাত্মক খাদ্য সংকট।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিনে বাগআঁচড়া, গোগা, কায়বা, পুটখালী ও উলাশী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়— গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বসতবাড়ি, স্কুল, পাকা রাস্তা, মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার পানিতে ডুবে আছে। ইছামতি নদীর পানি প্রতিদিনই বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করছে।
শার্শার প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ পানিতে ডুবে আছে। এতে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বুকসমান পানি পেরিয়ে অনেক কষ্টে স্কুলে যাতায়াত করছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। অভিভাবকরা বলছেন, “শিশুদের জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে। শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলা প্রশাসন প্লাবিত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেক পরিবার সেখানে আশ্রয় নিলেও রান্না করা খিচুড়ি ও শুকনো খাবার পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলছেন, “আমরা শুধু ত্রাণ চাই না, স্থায়ী সমাধান চাই। যাতে প্রতিবছর ভারতের উজানের পানি আমাদের গ্রামে ঢুকে জীবনে বিপর্যয় না ঘটায়।
কায়বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, রুদ্রপুর দাঁদখালির বাঁধ কৃষকদের সুবিধার্থে গত ইরি মৌসুমে কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা মেরামত করা হয়নি। এ কারণে এখন প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বাগআঁচড়া ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ পরিবার, উলাশী ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার, গোগা ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০০ পরিবার, কায়বা ইউনিয়নে ৮০০ পরিবার এবং পুটখালী ইউনিয়নে ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
এ ছাড়া স্থানীয় বাজারের দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আউশ ও আমন ধানসহ শাকসবজির আবাদও নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান, বন্যায় প্রায় ৪০০ হেক্টর আউশ ধান ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৬০০ হেক্টর জমি পানির নিচে থাকায় রোপা আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. কাজী নাজিব হাসান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
একদিকে ত্রাণ সংকট, অন্যদিকে শিক্ষা, কৃষি ও জীবিকার ধ্বংসযজ্ঞে শার্শার হাজারো পরিবার চরম মানবিক সংকটে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি— প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ এড়াতে ভারত থেকে ইছামতি নদীর উজানের পানির প্রবাহ ঠেকাতে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা জরুরি।