আমিনুল হক,নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় কুমিল্লার শরীফ এবারের ১১৬তম আসরেও একই জেলার রাশেদকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
৩০ মিনিটেরও বেশি সময় লড়াইয়ের পর প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন রাশেদকে।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা শরীফ ‘বাঘা শরীফ’ নামে পরিচিত।
গতবছর এই খেলায় প্রথমবার অংশ নিয়েই তিনি বাজিমাত করেন। আর রানার্সআপ হয়েছিলেন রাশেদ।
গত বছরের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এবারও ফাইনাল জমিয়ে দেন প্রথম ১৫ মিনিট। কৌশল ও শক্তির খেলায় কুস্তিতে দুজনই ছিলেন সমানে সমান।
গত বছরের খেলায় ১০ মিনিট ৪২ সেকেন্ড খেলার পর রাশেদ নিজ থেকেই পরাজয় শিকার করে শরীফের হাত তুলে ধরেন; যে কারণে রেফারি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু এবার টানা ১৫ মিনিট খেলে ফেলার পরও যখন জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়নি, তখন কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল মঞ্চে উঠে মাইকে জানিয়ে দেন, এবার ‘যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করা হবে না।
“তাদের কেউ যদি জেতার প্রবণতা না দেখায় তাহলে তাদের বহিষ্কার করে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা দুইজনকে চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ ঘোষণা করা হবে।”
সচিব শওকত আনোয়ারের এ ঘোষণার পর শরীফ ও রাশেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে থাকে। দর্শকরাও আনন্দে এ সময় করতালি আর ঢোলের তালে তালে দুই প্রতিযোগীকে উৎসাহ দিতে থাকেন।
২০ মিনিট খেলা চলার পরও কোনো ফলাফল না আসায় ফের শওকত আনোয়ার মঞ্চে উঠে রেফারিদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চান কীভাবে জয়ী ঘোষণা করা হবে।
অতিথি মেয়র মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে মাইক নিয়ে বলতে থাকেন, “খেলা হবে… ”
এসময় রেফারি ফের খেলা চালিয়ে যাওয়ার সংকেত দিয়ে ঘোষণায় জানান, “দুই জনের মধ্যে যিনি মাটিতে পড়ে যাবেন তিনি হবেন বিজিত, আর যিনি ফেলবেন তিনি হবেন জয়ী।”
ঘোষণা দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসে খেলার ফলাফল। শরীফ তার শক্তি প্রদর্শন করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদকে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করলে রাশেদ মঞ্চের রশি ধরে রাখেন।
এ কারণে রাশেদকে ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান। ততক্ষণে খেলাও গড়িয়ে গেছে ৩৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড।
এ বছর খেলায় প্রথম রাউন্ডে ৮০ জন অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রথম রাউন্ডের চারজন ও আগের বছরের শীর্ষ চারজন নিয়ে হয় চ্যালেঞ্জ রাউন্ড।
গত বছর তৃতীয় স্থান অধিকার করা সৃজন চাকমা এবারের আসরে অংশ নেননি। তাই গত বছর অংশ না নিলেও এবার অংশ নিতে আসা ১১৪তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালালকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে চট্টগ্রামের কাঞ্চনকে হারিয়ে কুমিল্লার কামাল,এবং একই জেলার দিপুকে হারিয়ে শরীফ সেমিনাল উঠে যান।
অন্যদিকে কুমিল্লার শাহজালাল ও রাশেদ যথাক্রমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাসেল ও রাঙামাটির রুবেলকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন।
সেমিফাইনালে অংশ নেওয়া সবাই ছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা।
ঐ্যতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় দর্শক মাতিয়েছেন অন্য কুস্তিগিররাও।
মাঠে ও আশেপাশের ভবনে ছিল উৎসাহী দর্শক।
বিকাল ৪টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। খেলা শেষে জয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
৮০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম রাউন্ডে জেতা ৪০ জনকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন বলী শরীফ পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। আর রানার্সআপ রাশেদ ২০ হাজার, তৃতীয় হওয়া কামাল ৬ হাজার ও চতুর্থ স্থান লাভ করা শাহজালাল পেয়েছেন ৪ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম শহরের বদর পাতির ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজন করেন কুস্তির, যা বলী খেলা নামে পরিচিত।