ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে দূর্গাপূজা উপলক্ষে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট

প্রতি বছরের ন্যায় দূর্গাপূজা উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাক-ঢোলের হাট।
  • আপলোড তারিখঃ 27-09-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 40077 জন
কটিয়াদীতে দূর্গাপূজা উপলক্ষে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
ad728



মাইনুল হক মেনু, স্টাফ রিপোর্টার :

প্রতি বছরের ন্যায় দূর্গাপূজা উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাক-ঢোলের হাট।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারে প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সংলগ্ন স্থানে বসে এ হাট। প্রতি বছরের মতো এবারও শনি, রবি ও সোমবার এই তিন দিনব্যাপী চলবে ৫শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঢাক-ঢোলের হাট। 

জনশ্রুতি আছে, কটিয়াদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ের রাজ প্রাসাদ। সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। পূজা উপলক্ষে ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য রাজাপ্রাসাদ থেকে সুদূর মুন্সিগঞ্জে বিক্রমপুরের বিভিন্ন পরগণায় বার্তা পাঠানো হতো। সে সময় নৌপথ ব্যবহার করা হতো। ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই/তিন দিন আগে এসে পৌঁছাতেন। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পালিত হতো দূর্গাপূজা। সেইসঙ্গে চলতো পূজায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। পরবর্তীতে দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ¦ন্দ্ব শুরু হয়। এবং পরিশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তন হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারে প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সংলগ্ন স্থানে গড়ে উঠে এ ঢাকের হাট। এই হাটে ঢাক-ঢোল, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসিসহ শত শত বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে। বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশির সুরে নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের মন আকৃষ্ট করেন থাকেন।

ঐতিহ্যবাহী এ ঢাক-ঢোলের হাট দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীরা আসেন। পূজার আয়োজকগণ বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঢাকা, ব্রাক্ষ্রণ বাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুর্গাপূজার দু-একদিন আগে এসে এই হাট থেকে যার যার পছন্দ মতো বাদ্যযন্ত্রীদের ভাড়ায় বায়না দিয়ে নিয়ে যেতেন। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামণ্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ঠ করে থাকেন। 

ঢাক-ঢোলের হাটে ভালো মানের একটি ঢাক ৬ থেকে ৮ হাজার, ঢোল ৩-৫ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ৫ থেকে ৮ হাজার, ব্যান্ডপার্টি ছোট ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার এবং বড় ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়ে থাকে। 

কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব ও উপজেলা বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র রায় (নিমাই)  বলেন, কটিয়াদীতে ঢাক-ঢোলের হাট আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য। এদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ঢাক-ঢোল, বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের এখানে মেলা বসে। তাদের  দেখাশোনা ও তদারকি করছি আমরা। হাটে অস্থায়ী মনিটরিং কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এবছর কটিয়াদী উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে সর্বমোট ৪২টি মন্ডপে সর্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ  মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাক-ঢোলের হাটে ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের কটিয়াদীতে মেলার আমেজ মনে হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সবসময় কাজ করছে।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈদুল ইসলাম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহি কটিয়াদী বাজারে বসে ঢাক-ঢোলের হাট। বাদ্যযন্ত্রীদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক টিমসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। কটিয়াদী সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। আমরা সুন্দর এবং উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গা পূজ উদযাপন করতে পারবো ইনশাল্লাহ।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

শার্শায় সালিশ বৈঠকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একই পরিবারের ১০ জন আহত