গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নিখোঁজের চারদিন পরে বাড়ির পাশে জঙ্গলের পুকুর পাড় থেকে পাঁচ বছরের এক ছেলে শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ছয়টায় উপজেলার পাগলা থানাধীন দিঘীরপাড় এলাকার বাড়ির পাশে একটি জঙ্গল ও পুকুর পাড়ে শরীর থেকে মাথা ও পা তিন-খন্ডিত গলিত অবস্থায় শিশুটির ক্ষত- বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আইমান সাদাব (৫) পাশ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আল আমিনের একমাত্র ছেলে। তবে জন্মকাল থেকেই সে তার মা সুমাইয়া আক্তারের সাথে গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘীরপাড় (অতার বাড়ী) গ্রামের তার নানা সুলতান মিয়ার বাড়িতে বসবাস করতো।
নিহত সাদাবের নানা সুলতান মিয়া জানান, গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টা দিকে বাড়ির সামনে মাইকে শব্দ শুনে দোকানে গিয়েছিল। হঠাৎ করে আর খোঁজ মিলছিল না। পরে বাড়ি আশপাশের পুকুর-ডোবা ও স্বজনদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও আর পাওয়া যায়নি। এদিন রাতেই পাগলা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রতিবেশী একজন গরু চড়াতে গিয়ে এসে জানায়, জঙ্গলের সাইডে পুকুর পাড়ে দ্বি-খণ্ডিত এক শিশুর লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে সাদাবের লাশ শনাক্ত করেন তারা। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নিহত সাদাবের আরেক নানা মোফাজ্জল হোসেন জানান, তাদের নাতি সাদাবকে বাড়ি সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছে।
অপহরণকারীরা তাদের মুঠোফোনে প্রথমে ২০ হাজার টাকা ও পরে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করেন। দুই দফায় ২৭ হাজার টাকা পাঠানোর পর মুঠোফোনগুলো বন্ধ করে দেয় অপহরণকারীরা।
নিহত সাদাবের মা সুমাইয়া আক্তার কান্না জড়িতকণ্ঠে বলেন, আমার একমাত্র নিষ্পাপ ছেলে কি অন্যায় করেছে। তাকে এভাবে অপহরণ করে দাবিকৃত টাকা নিয়েও ৪ দিন আটকে রেখে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের বুক খালি করেছে। আমি আমার নিস্পাপ ছেলে সাদাবের খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই।
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে ।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরশাঁখচূড়া গ্রামে বাড়ি সামনে থেকে নিখোঁজ ১১ বছরের অপর শিশু শিক্ষার্থী, সৌদি প্রবাসী নূর ইসলামের ছেলে সিফাত হাসানের লাশ একদিন পর বাড়ির পাশে জনৈক ব্যক্তির পুকুরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
চারদিনের ব্যবধানে পাশাপাশি এলাকায় প্রবাসীর দুই শিশু অপহরণের পর দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কোনো চক্র এ ঘটনাগুলো সাথে জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখা জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।