ক্ষিধায় বিলীন হয় যে প্রেম
(কষ্টের ছোট গল্প)
-আমিনুল হক নজরুল
রুহি আর রবিন, ছোট্ট এক গ্রামে, খুব সাধারণ এক জীবনের অংশ ছিল। দু’জনের ভালোবাসা গাঢ় হলেও বাস্তবের কষ্ট সেই প্রেমে ছায়া ফেলছিল ধীরে ধীরে।
রুহির বাবা দিনমজুর, আর রবিন এক চায়ের দোকানে কাজ করে। ভালোবাসার শুরুটা ছিল খুব নিরীহ, এক কাপ চায়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা হওয়া, কিছু চুপচাপ তাকানো, মাঝে মাঝে দু’একটা চিঠি দেওয়া-নেওয়া।
কিন্তু ভালোবাসা শুধু চোখে চোখ রাখলে চলে না, পেটও ভরাতে হয়।
দিন দিন কাজ কমে যেতে লাগলো। রবিনের দোকান বন্ধ হয়ে গেল। সে ঢাকায় চলে যাবে—এমন সিদ্ধান্ত নেয়, রুহিকে না জানিয়েই।
একদিন হঠাৎ রুহি চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখে, তালা ঝুলছে।
কোনো চিঠি নেই, কোনো খবর নেই।
দিন যায়, ক্ষুধা বাড়ে। রুহির মা ভাত জোটাতে পারছে না। বাবার শরীর খারাপ, কাজ বন্ধ।
রুহির পেটের ক্ষুধা আর হৃদয়ের ক্ষুধা—দুটোই যেন একসাথে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে।
ভালোবাসা তখন শুধুই এক বিলাসিতা।
এক রাতে মা বলল,
— “তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলেটা ঢাকায় কাজ করে, খাবারের কষ্ট থাকবে না।”
রুহি চুপ করে থাকলো। চোখের কোণে জল, কিন্তু পেটের ক্ষিধা ছিলো বেশি জ্বালাময়ী।
এক বছর পর রবিন ফিরে আসে।
চোখে-মুখে হতাশা। সে ফিরে এসেছিল রুহির জন্য…
কিন্তু রুহির কপালে তখন সিঁদুর।
রবিন মাথা নিচু করে চলে যায়।
আর ভাবে—
"প্রেম ক্ষিধা সহ্য করতে পারে না।
যেখানে পেট খালি, সেখানে হৃদয়ও ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যায়..."