ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব সংকটে হাওরের জেলে সম্প্রদায়

হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে প্রায় ৮৫০০ হাজার জেলে পরিবারের বাস। খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় বছরের প্রায় ৬মাস বেকার থাকতে হয় বলে তাদের অধিকাংশই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে, সংসারের ভরণ পোষণ, নৌকা-জাল কিনতে ঋণের বোঝায় জর্জরিত তারা। এ ঋণ পরিশোধের টেনশনে গভীর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন।
  • আপলোড তারিখঃ 06-10-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 28021 জন
অস্তিত্ব সংকটে হাওরের জেলে সম্প্রদায় ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
ad728

অস্তিত্ব সংকটে হাওরের জেলে সম্প্রদায়

হাওরাঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:

খাল, বিল, নদী, অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম। এক সময়ের উত্তাল ধলেশ^রীর পার ঘেষে গড়ে উঠা এই হাওর জনপদ বর্ষায় প্লাবিত হয় বিশাল জলরাশিতে। আবার শুকনো মৌশুমে দেখা দেয় খরা। খাল, বিল ফেটে হয় চৌচির।
প্রমত্তা ধলেশ্বরী রূপান্তরিত হয় সবুজ ফসলের মাঠে। মাছের ভান্ডার বলে খ্যাত এই হাওরে দেখা দেয় দেশীয় মাছের সংকট। জেলেরা তখন বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে।

হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে প্রায় ৮৫০০ হাজার জেলে পরিবারের বাস। খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় বছরের প্রায় ৬মাস বেকার থাকতে হয় বলে তাদের অধিকাংশই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে, সংসারের ভরণ পোষণ, নৌকা-জাল কিনতে ঋণের বোঝায় জর্জরিত তারা। এ ঋণ পরিশোধের টেনশনে গভীর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন।

জেলে পাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পর ঘর, ছোট ছোট খোপরি। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে জড়াজীর্ণ টিন-বাঁশের নড়বড়ে খোপরি ঘর। বাসিন্দাদের চোঁখে মুখে হতাশার ছাপ। নির্ঘুম চোখ, শরীরে ক্লান্তি ভাব। রোগা জীর্ণ শীর্ণ দেহ। সবকিছু যেন স্বাক্ষী দিচ্ছে নিদারুন দৈন্যতার। এরকম চরম দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে হাওরের নিভৃত ছোট ছোট পল্লীতে বাস করছে হিন্দু ধর্মবলম্বী এ জেলে সম্প্রদায়। আবহমান কাল ধরে বংশ পরম্পরায় তারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টের কারণে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। ওলট পালট হয়ে গেছে তাদের জীবন ধারা। স্বাভাবিক জীবিকা প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং দেখা দিয়েছে অস্থিত্ব সংকট। উজান থেকে নেমে আসা পলি, বালি জমে ভরাট হয়ে গেছে হাওরের নদী, নালা, খাল, বিল। জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী দুর্যোগের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে নদীর তীরে গড়ে ওঠা নদী কেন্দ্রীক জীবিকা নির্ভর এ জনগোষ্ঠীর জীবিকার উপর। পর্যাপ্ত জলাধারের অভাব, নদীতে মাছের অপ্রতুলতার কারণে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়েছে তারা। মনে হচ্ছে প্রকৃতি তার নিজ হাতে কেড়ে নিয়েছে এ জেলে পল্লীর সুখ। এক সময় ঘাটে ঘাটে বাঁধা থাকত সারি সারি মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা । মাছ ধরার ক্ষেত্রও ছিল অবাধ। এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকালে মাছ ধরার সুযোগ থাকলেও জলমহালগুলো থাকে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ইজারাদারদের দখলে। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও বন্ধ হয়নি জলমহাল ইজারা প্রথা। কেবল অসাধু দখলদারদের হাত বদল হয়েছে। নৌকা প্রতি ২৫ হাজার টাকা ইজারাদারদের দিয়ে জলমহালের আশে পাশে মাছ ধরার সুযোগ পেলেও পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় নিদারুন অভাব অনটনে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। পক্ষান্তরে হাওরের অধিকাংশ কৃষক কৃষি কাজের পাশাপাশি মাছ ধরার সকল কৌশল রপ্ত করে নিয়েছে। বর্ষাকালে তারাও মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকেন। এমনকি মাছ ধরার ক্ষেত্রে তাদের জালের ধারে জাল ফেললে দূর্বল প্রকৃতির জেলে সম্প্রদায়ের উপর জোর জবরদস্তি করা হয়। ফলে তাদের ভয়ে জেলেরা যত্রতত্র জাল ফেলতে ভীত সন্ত্রস্থ থাকে।

গভীর রাত জেগে এমনকি সারা রাত অনেক সময় ঝড়, বৃষ্টি, কনকনে শীত উপেক্ষা করে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে হয় তাদের । অক্লান্ত পরিশ্রমে তারা শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা করতে না পেরে নিদারুন দুঃখ কষ্টে ভোগতে হয় তাদের। ফলে পরিবারের উপর নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। তাছাড়া জাতিভেদ বর্ণ প্রথার ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের কারণে অন্যান্য পেশাজীবিদের তুলনায় জেলে সম্প্রদায় নীচু অবস্থানের হওয়ায় সামাজিকভাবেও তারা হয় অবহেলিত। পরিবার পরিজন নিয়ে এভাবেই তারা বছরের পর বছর মানবেতর জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

নানা কারণে মাছ ধরা এখন জেলে সম্প্রদায়ের কাছে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। ফলে তারা একমাত্র অবলম্বন মাছ ধরা পেশা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছে। দৈনিক কৃষি মজুরী করতে দেখা যায় জেলে নারী-পুরুষদের। অভ্যস্থ না থাকায় অন্য পেশার কাজও তারা সঠিকভাবে করতে পারছে না। তবুও সকাল-সন্ধা কৃষি শ্রমে নিয়োজিত থেকে কোন রকমে অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন।

ইতিমধ্যে সরকারি উদ্যোগে নদী খননের কাজ চলছে। হাওরের জলমহালগুলো অবমুক্ত করে উন্মুক্ত করে দিলে জেলেরা অবাধে মাছ ধরার সুযোগ পাবে। মাছ ধরা ছাড়াও তাদের প্রশিক্ষিত করে টেকসই ও বিকল্প জীবিকার উৎস বের করা এখন সময়ের দাবী। সরকারি নানামুখী সুবিধা নিশ্চিত, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করণের মাধ্যমে হাওরের জেলে সম্প্রদায়কে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তাদের জীবনমানে গতি সঞ্চালিত করা সকলের প্রাণের দাবী।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ-আল-মামুন এ প্রতিনিধিকে জানান, হাওরে হতদরিদ্র জেলেদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা বিবেচনা করে আগামী বছর থেকে তাদের জন্য ভিজিএফ কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

আমি দলে কোন্দল দেখতে চাইনা, যদি কারও কোন্দলে দল ভোট কম পায়, তাকে ক্ষমা করা হবেনা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. ফজলুর রহমান