ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশনের ন্যায্য দাবি

আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত এবং স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ অধিভুক্ত চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি (ডেন্টাল) কোর্সের সনদধারী। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ প্রায় ১৫,০০০ (পনেরো হাজার) ডিপ্লোমাধারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
  • আপলোড তারিখঃ 29-08-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 21261 জন
ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশনের ন্যায্য দাবি ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
ad728

ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশনের ন্যায্য দাবি


লায়ন মো. কামাল হোসেন :

আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত এবং স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ অধিভুক্ত চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি (ডেন্টাল) কোর্সের সনদধারী। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ প্রায় ১৫,০০০ (পনেরো হাজার) ডিপ্লোমাধারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে।


অবহেলিত, বঞ্চিত ও শ্রেণী বৈষম্যের শিকার এই বিপুল সংখ্যক সুপ্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে।


শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা:

সরকার অনুমোদিত ৮টি সরকারি ও ১০৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ কোর্স চালু রয়েছে।

প্রতি বছর প্রায় ২,৫০০ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা শেষ করছে, ফলে দ্রুত বাড়ছে বেকারত্ব।

কোর্স চলাকালীন দেশের স্বনামধন্য মেডিক্যাল কলেজসমূহের বিডিএস পাসকৃত ডেন্টাল সার্জন ও অধ্যাপকগণ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।


কর্মসংস্থানের সংকট:

সরকারি চাকরির জন্য মাত্র ৫১৫টি পদ রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে শূন্য মাত্র ১৪টি।

দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না থাকায় প্রায় ৪,০০০ ডিপ্লোমাধারী বয়সসীমা অতিক্রম করে সরকারি চাকরির সুযোগ হারিয়েছে।

বেসরকারি ডেন্টাল চেম্বারে নিয়োগের কোনো আইনগত বিধান নেই (দি মেডিক্যাল প্র্যাক্টিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুযায়ী)।

চাকরি নেই, আবার প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অনুমতিও নেই। অথচ প্রতি বছর নতুন নতুন ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।


বৈষম্য ও বঞ্চনা:

মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টরা, যারা সমশিক্ষাগত যোগ্যতা ও সমবেতন স্কেলের আওতায়, প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। অথচ আমরা পাইনি।

দেশে ৭৬,০০০ এমবিবিএস ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। অথচ মাত্র ৭,০০০ বিডিএস ডাক্তার থাকার পরও ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না।

১৯৮০ সালের বিএমডিসি আইনে জ্ঞানহীন ও অযোগ্য ব্যক্তিদেরও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য বজায় রাখা হচ্ছে।

হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি চিকিৎসায় ডিপ্লোমাধারীরা বৈধভাবে প্র্যাক্টিস করতে পারলেও ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা সে সুযোগ পাচ্ছে না।


আইনি দিক:

১৯৮৩ সালে বিএমডিসি প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, তবে অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের কাজের আওতা নির্ধারণ করে রেজিস্ট্রেশনের সুপারিশ করলেও আজও সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।

সম্প্রতি ডিপ্লোমাধারীরা মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট করে পক্ষে রায় পেয়েছে, এবং আপিল বিভাগও সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাই বৈধভাবে প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাওয়া আইনসম্মত।


জনস্বাস্থ্য ও বাস্তবতা:

দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৭,০০০ বিডিএস দন্ত চিকিৎসক, যাদের অধিকাংশ বিভাগীয়/জেলা শহরে অবস্থান করেন।

গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ দন্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।

বিডিএস চিকিৎসকের চিকিৎসা ব্যয় অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য অক্ষমসাধ্য।

অন্যদিকে প্রায় ১৫,০০০ ডিপ্লোমাধারী তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানহীন অবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।


উপসংহার ও দাবি:


স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪২ বছরেও ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেনি।

চাকরির সুযোগ সীমিত,

প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অনুমতি নেই,

অথচ পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থেকে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকা পড়তে হচ্ছে।


অতএব, দেশের জনস্বাস্থ্য ও জনগণের মৌলিক চিকিৎসা চাহিদার কথা বিবেচনা করে ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন প্রদান এখন সময়ের দাবি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

পানছড়িতে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ (মূল) এর মধ্যে গুলিবিনিময়, অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার।