ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সীমান্তে বন্যায় মাছ ও ধান চাষে মহাবিপর্যয়: সরকারের সহায়তার আশায় হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত চাষি

যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বহিলাপোতা ও হরিনাপোতা মৌজায় ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে প্রায় এক হাজার একর জমি। এতে ভেসে গেছে ধানক্ষেত ও শতাধিক মাছের ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা।
  • আপলোড তারিখঃ 25-09-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 42374 জন
সীমান্তে বন্যায় মাছ ও ধান চাষে মহাবিপর্যয়: সরকারের সহায়তার আশায় হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
ad728



হুমায়ন কবির মিরাজ, বেনাপোল:

যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বহিলাপোতা ও হরিনাপোতা মৌজায় ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে প্রায় এক হাজার একর জমি। এতে ভেসে গেছে ধানক্ষেত ও শতাধিক মাছের ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিনাপোতা ৫৫ নম্বর মৌজার  ১ নম্বর দাগের সরকারি খতিয়ানভুক্ত জমি দীর্ঘদিন ধরে ডেকে নেয় বুজতলা, বুকপাড়া ও ঘিবা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ডিসি অফিস থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল পহেলা বৈশাখের মধ্যে জমির দাগ বুঝিয়ে দেওয়ার। কিন্তু প্রশাসনিক গাফিলতিতে তা বিলম্বে শ্রাবণ মাসে হস্তান্তর করা হয়। এতে সময়মতো ভেরি বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বাঁধের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় অতিবৃষ্টির পানি হুহু করে ঢুকে পড়ে ঘের ও ধানের জমিতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত।


ক্ষতিগ্রস্ত সমবায় সমিতির সদস্যরা জানান, আমরা সবাই মিলে বহু কষ্টে এই জমিতে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। ভেরি বাঁধ নির্মাণের সময় না পাওয়ায় আমাদের সব ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ঘের তৈরি করেছিলাম, ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। এখন মাছ নেই, ঘের নেই, অথচ দেনার বোঝা কাঁধে চেপে বসেছে।


তারা আরও বলেন, মাছগুলো ভেসে যাওয়ার পরও আমরা হাল ছাড়িনি। খৈল ও মাছের খাদ্যের দোকানে ধার দেনা করে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে গেছে। সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চিত হয়ে গেছে।


স্থানীয় চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে আমাদের এই ক্ষতি হয়েছে। যদি সময়মতো জমির দাগ বুঝিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে ভেরি বাঁধ তৈরি করে আমরা ঘেরগুলো রক্ষা করতে পারতাম। আমরা মাছ চাষিরা দেশের আমিষের বড় যোগানদাতা। অথচ আমাদের দুর্দশার দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না। সরকারের দ্রুত সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ না পেলে আমরা পুরোপুরি পথে বসে যাব।


বহিলাপোতা ফিসারিজ প্রজেক্টের চাষিরাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা জানান, এই প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন। অনেকেই ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।


এলাকার প্রবীণ কৃষকরা বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ কৃষি আর মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল। ধান ও মাছই আমাদের প্রধান জীবিকা। এবারের বন্যায় সেই জীবিকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এত বড় ক্ষতির মুখে যদি সরকার তৎপর না হয়, তবে সীমান্তের হাজারো পরিবার মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

শার্শায় সালিশ বৈঠকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একই পরিবারের ১০ জন আহত