ইফরানুল হক সেতু, বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সরারচর বাজার, যা একসময় ফতেপুর নামে পরিচিত ছিল, আজ এক সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ এই বাজার স্বাধীনতার পরও গরু বেচাকেনার অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিল।
তবে গত এক যুগ ধরে বাজার ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সাল থেকে মহিউদ্দিন আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজারা প্রক্রিয়ায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। চলতি ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য বাজারটি মাত্র ৪৩ লক্ষ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে, যেখানে বাজারের প্রকৃত মূল্য কোটি টাকার বেশি। সিন্ডিকেটের কারণে অন্য কেউ ইজারার সিডিউল জমা দিতে পারেননি, ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারের গরুর হাটে নানা ধরনের ব্যবসা চলছে। ইজারার নিয়ম ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ৮৪টি দোকান নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের ভাড়ায় চালানো হচ্ছে। এসব দোকান ১২ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ভাড়ায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
একজন কাপড় ব্যবসায়ী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, জানান, গরুর হাটের ভেতরে ২৩টি কাপড়ের দোকানসহ ৮৪টি দোকান গড়ে উঠেছে। এতে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা সরকারি কোষাগারে জমা পড়ার কথা থাকলেও ব্যক্তি-স্বার্থে লুটপাট হচ্ছে।
বাজিতপুর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম লিংকন বলেন, “মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর বাজারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। তারা অবৈধ দোকান নির্মাণ, হাট সাব-লিজ ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন।”
বাজার ইজারায় অনিয়ম ও দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইজারাদার মহিউদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সরারচর বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা প্রশাসনের কাছে বাজারের নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
- বিষয়টি নিয়ে বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাশিদ বিন এনাম বলেন, “অতীতে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাজার ইজারা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০২৪ সালের নতুন নীতিমালার কারণে এখন সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পাবে। সরকারি জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ ধরনের কার্যক্রম বেআইনি এবং প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।