রূপালী আলো:
দীর্ঘ ৯ বছর পার হয়ে গেল বাবা নেই। ২৫ মার্চ ছিল বাবার মৃত্যু বার্ষিকী। এসময়টা এলেই বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ে।
আমার বাবা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একজন ই'ডি কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু আমি ই,ডি শব্দটা কি? কাকে বলে? কখনো জানতাম না, বুঝতাম না। কিন্তু আব্বু অনেক সময় দুঃখ প্রকাশ করে বলতেন, যদি আমার চাকরিটা সরকারি হতো, আমাদের দুঃখ কষ্ট চলে যেত।
নাম মাত্র সম্মানী ভাতায় মেঘে ভিজে রোদে শুকিয়ে তিনি সরকারের ডাক সেবা সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। কিন্তু কখনো তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
প্রায় ৩০টা বছর মানুষের সেবায় নিজকে নিয়োজিত রেখে তার স্বপ্ন পূরণের আগেই হঠাৎ এক দিন আমাদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।
২৩ হাজার ই,ডি কর্মচারী ভাই বোনদের কেউ জানতো না তাদের একজন সহকর্মী শুধু ডাক বিভাগ নয়, পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। বিদায় বেলায় ডাক বিভাগ কিছুই দেয়নি তাকে। দেয়নি কাফনের কাপড়ের টুকরো টুকুও!
ভাগ্য বলে কথা! একজন ডাক কর্মচারীর সন্তান হিসেবে একদিন আমিও ডাক বিভাগে ইডি কর্মচারী হিসেবে যোগদান করি। আসলে আমি দেখতে চেয়েছি কি আছে, কি নাই, কোন দোষে এই ডাক ই,ডি কর্মচারীদের ভাগ্যাকাশে মেঘের ঘোর কেটে উঠছে না! কারণ আমি একজন ই,ডি কর্মচারীর মেহনত করা ঘামের টাকায় বেড়ে উঠা এক কন্যা।
সততাকে আকড়ে ধরে আমি একদিন ইডি কর্মচারীদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ পোস্টাল ই,ডি কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান করি।
সংগঠনের কাজগুলো সবসময় দায়িত্ববোধ থেকেই করতে চেষ্টা করি।
দায়িত্ব পালন যারা করে তারা দোষী হয় আগে বুঝতাম না। আস্তে আস্তে যখন বড় হতে হতে শিখছি তখন বুঝতে পারছি যে, আলোচনায় আসতে গেলে সমালোচনা লোকে করবেই। বুঝতে পেরেছি এখানে
টেনে নিচে ফেলার মানুষের অভাব নেই, কিন্তু উপরে উঠার মানুষ হাতে গুনা কয়েকজন মাত্র।
বাবা মা ও ই,ডি কর্মচারী ভাই বোনদের দোয়ায় ১৫মার্চ ২০২৫ খ্রিঃ তারিখে ইডি কর্মচারীদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত
বাংলাদেশ পোস্টাল ই,ডি কর্মচারী ইউনিয়ন ঐক্য পরিষদের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে আমিও একজন।
দু'জন মহিলা সদস্য এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে একজন মুক্তিযুদ্ধা সন্তান শামীমা শুকতারা আর আমি ৩০ বছর ডাক সেবা দেওয়া এক পরাজিত সৈনিকের মেয়ে হালিমা বেগম। আমি আমার অবস্থান থেকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে ২৩ হাজার ইডি কর্মচারীর নিকট অঙ্গিকারবদ্ধ।
আমারা যতটা জানি স্বাধীনতার পর সবার স্বপ্নই পূরণ হয়েছে। সর্বশেষ ইবতেদায়ী শিক্ষকদেরও। আমরাই একমাত্র হতভাগ্য কর্মচারী যারা এখনো স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে হতাশায় অনিশ্চিত এক পথে হাটছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি আমাদের মাঝে সততা, একতা ও দায়িত্ববোধ থাকে ২৩ হাজার ইডি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের দুঃখাগাঁথা সরকারের নিকট তুলে ধরে আমাদের সকল দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক: একজন ইডি কর্মচারীর সন্তান ও ইডিএ, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।
সদস্য : বাংলাদেশ পোস্টাল ই,ডি কর্মচারী ইউনিয়ন ঐক্য পরিষদ।