ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অর্থাভাবে হয়নি সুচিকিৎসা দায়িত্ব নিলেন ইউএনও কটিয়াদীতে ১২ বছর পর শিকলবন্দি জীবনের অবসান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই বোন আছমা খাতুন (২৮) ও জাহাঙ্গীর (২৫) দীর্ঘদিন ১২ বছর ধরে জীবন কাটাচ্ছেন শিকলেবন্দি অবস্থায়।
  • আপলোড তারিখঃ 26-08-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 25791 জন
অর্থাভাবে হয়নি সুচিকিৎসা দায়িত্ব নিলেন ইউএনও  কটিয়াদীতে ১২ বছর পর শিকলবন্দি জীবনের অবসান ছবির ক্যাপশন: ১২ বছর পর শিকলবন্দি জীবনের অবসান
ad728



মাইনুল হক মেনু, স্টাফ রিপোর্টার :

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই বোন আছমা খাতুন (২৮) ও জাহাঙ্গীর (২৫) দীর্ঘদিন ১২ বছর ধরে জীবন কাটাচ্ছেন শিকলেবন্দি অবস্থায়।

অর্থের অভাবে হয়নি তাদের ভালো চিকিৎসা, খবর পেয়ে দায়িত্ব নিলেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইদুল ইসলাম। এতে ১২ বছর পর অবসান হলো শিকলবন্দি জীবনের। শিকলমুক্ত হয়ে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন প্রেমে প্রতারনার শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই বোন জাহাঙ্গীর ও আসমা।

জানা য়ায়, আছমা ১২ বছর এবং জাহাঙ্গীর ১০ বছর ধরে হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা দিনমজুর ফজলু মিয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুইজনই মানসিক ভারসাম্যহীন। অর্থের অভাবে এতদিন করাতে পারেননি তাদের সুচিকিৎসা। তাদের জীবন যাপন, আচার আচরণ ও চলাফেরা অস্বাভাবিক হওয়ায় এলাকার মানুষ তাদেরকে পাগল বলে। হাতে লাঠিসোটা থাকলে মানুষের উপর আঘাত করে। প্রতিদিনই তাদের বিরুদ্ধে নানা বিচার আসতে শুরু করলে, বাড়ির লোকজন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আছমা খাতুন ও জাহাঙ্গীরকে শিকল দিয়ে বন্দি করে রাখেন। শিকলে বন্দি ভাই-বোনের মানবেতর জীবন যাপনের কথা সংবাদকর্মীদের কাছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মো. মাঈদুল ইসলাম জানতে পেরে নিজ চোখে দেখতে ছুটে যান তাদের বাড়িতে। পরে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পরামর্শে সোমবার দুপুরে এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ঢাকা মানুষিক হাসপাতালে পাঠিয়ে তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থত ছিলেন কটিয়াদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) লাবনী আক্তার তারানা ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল খায়ের। 

স্থানীয়রা জানান, দিনমজুর ফজলু মিয়ার ভাঙ্গাচুরা একটি ঘরের এক কোণে আছমা আক্তারের পায়ে এবং খানিকটা দূরে আরেক কোণে খুঁটির সঙ্গে জাহাঙ্গীরকে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধে রাখা হয়। গ্রীষ্ম, শীত ও বর্ষা, দিন-রাত একই ভাবে ঘরের খুঁটি ও  গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি অবস্থায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে-না খেয়ে বছরের পর বছর এভাবেই কাটছে তাদের জীবন। বৃদ্ধ বাবা দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালালেও, মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। অতি দারিদ্র্যের কারণে দুই ভাই-বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেননি তাদের বাবা ফজলু মিয়া। ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানরা যাতে করে হারিয়ে না যায় বা কারও যেন কোন ক্ষতি না করে ফেলে এই ভয়ে তাদের সর্বাবস্থায় শিকল বেধে রাখা হয়।

আছমা খাতুন ও জাহাঙ্গীরের বোন সালমা আক্তার এই প্রতিনিধিকে জানান, তারা জন্মগত পাগল নয়। আছমা ও জাহাঙ্গীর অন্য বোনদের মতই স্বাভাবিক সুন্দর জীবন যাপন করতো। আছমার বয়স যখন ১৪/১৫ তখন সে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরী করাবস্থায় তার এক সহকর্মীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। যেটাকা বেতন পেতো তা থেকে খরচ বাদে বাকী টাকা বিশ্বাস করে ভালোবাসার মানুষটির কাছে জমা রাখতো। ভালই কাটছিলো তার দিন। কিছু দিন পড়েই সে প্রতারক লোভী প্রেমিক কৌশলে তার সঞ্চিত টাকাগুলো হাতিয়ে পালিয়ে যায়। অনেক চেষ্ঠা করেও তার কোন সন্ধান করতে পারেনি। এরপরেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তখন থেকেই শিকলে বাঁধা পড়ে আছমার জীবন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসা করে ভালোই কাটতো ভাই জাহাঙ্গীর জীবন। জাহাঙ্গীরের জীবনেও ঘটে প্রেম নামের প্রতারনা। বোন মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার ২/৩ বছর পর প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীর। ভাগ্যে জুটে বোনর মতোই শিকলবিন্দ জীবন। বোন সালমা আরও বলেন, আমাদের কোনো জমিজমা নেই। আমরা চার বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। একটি ছোট্ট ঘরে আমাদের কোনো আসবাবপত্র নেই। আমরা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। মানুষে দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। এরই মধ্যে দুই ভাই-বোন মানসিক রোগী হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা সারা জীবন ইউএনও সারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। স্যার আমার ভাই বোনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ উনার ভালো করবেন।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই বোন ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে, বিষয়টি খুবই অমানবিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিষয়টি জানার পর তাদের বাড়ি পরিদর্শন করে, তাদের মানবিক বিপর্যয় দেখে তাৎক্ষণিক সহায়তার চিন্তা করি এবং ডিসি স্যারের পরামর্শে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। একটি এ্যাম্বুল্যান্সে করে তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মানসিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি। তাদের হাতে নগদ আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছি। তাদের সুচিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক ভাবে সহযোগিতা করা হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

পানছড়িতে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ (মূল) এর মধ্যে গুলিবিনিময়, অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার।