মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে তিনটি আদেশ তিনটি নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হল ন্যায়বিচার করা, একে অপরকে সম্মান করা ও নিকট আত্মীয়দের সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আর তিনটি নিষেধ হলো অশ্লীলতায় না জড়ানো ও ইচ্ছাকৃত মন্দ বা অসৎ কাজে না জড়ানো এবং সীমালঙ্ঘন না করা। এ আদেশ নিষেধ মেনে নিতে পারলে আমাদের সমাজ সুখী, সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে।
আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের শেষদিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে স্মৃতিচারণ করে মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, উনাকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান সাঈদীর স্মৃতি বিজড়িত ময়দান। আমরা কোরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনোভাবে এ ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।আমরা যদি সব ধরনের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে পারি, তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি, গুম, খুন দূর করতে পারব। ১৬ বছরের জঞ্জাল ৬ মাসে দূর করা সম্ভব না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। এ দেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।আমরা যদি দেশে সুখ শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশারের সঞ্চালনায় ও সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মাওলানা শামীম সাঈদী, মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম।
মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, ১৩ বছর জেলে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি। কোরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা সাঈদী দেশের আনাচে-কানাচে গেছেন। কোরআনের রাজ কায়েম করতে যদি আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় আমরা সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব।
২৯ বছর আগে থেকে প্যারেড ময়দানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে আসছে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকতেন প্রয়াত ইসলামী চিন্তাবিদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তার উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হতো পুরো প্যারেড ময়দান। বাধা কাটিয়ে ১৮ বছর পর সাঈদীর স্মৃতিবিজড়িত সেই মাঠে শুরু হয় ঐতিহাসিক এ তাফসির মাহফিল।
এদিকে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ান শুনতে শুক্রবার সকাল থেকে প্যারেড ময়দানের দিকে জনতার ঢল নামে। এদিন প্যারেড ময়দান এলাকায় জুমার নামাজে বিপুল পরিমাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করে। আসরের আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাগরিবের পর প্যারেড ময়দানে আর তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এরপর প্যারেড ময়দান সংলগ্ন চকবাজার তেলিপট্টি মোড় থেকে এক্সেস রোড, অঁলিখা মোড় থেকে গণি বেকারীর মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।