ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কচুয়ায় স্কুল শিক্ষিকার ক্লাসে উপস্থিতি বছরে মাত্র ৬৩ দিন

কচুয়ায় ৬৩ দিন ক্লাস করে অনুমতি ছাড়া বছর জুড়ে ছুটি কাটাচ্ছেন সহকারি শিক্ষিকা জুুলেখা বিলকিস।উপজেলার ৫ নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস বিগত এক বছর ধরে মাত্র ৬৩ দিন ক্লাস করে ছুটি কাটাচ্ছেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
  • আপলোড তারিখঃ 30-08-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 70740 জন
কচুয়ায় স্কুল শিক্ষিকার  ক্লাসে উপস্থিতি বছরে মাত্র ৬৩ দিন ছবির ক্যাপশন: নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস
ad728



আয়েশা সিদ্দিকা,  নিজস্ব সংবাদদাতা 

কচুয়া (বাগেরহাট):

কচুয়ায় ৬৩ দিন ক্লাস করে অনুমতি ছাড়া বছর জুড়ে ছুটি কাটাচ্ছেন সহকারি শিক্ষিকা জুুলেখা বিলকিস।উপজেলার ৫ নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস বিগত এক বছর ধরে মাত্র ৬৩ দিন ক্লাস করে ছুটি কাটাচ্ছেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা পদে জুলেখা বিলকিস ২০০৪ সালে ৪ নং বিষারখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম যোগদান করেন পরে ফকিরহাট উপজেলায়, এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ তিনি ৫ নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি পরবর্তী যোগদান করেন। প্রথমদিকে তিনি নিয়মিত ক্লাস করলেও অদৃশ্য শক্তি বলে ২০২৪ সালের দিকে শারীরিক অসুস্থতা সহ নানা তালবাহানা দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে হাজিরা খাতা অনুযায়ী যাচাই সাপেক্ষে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ,শিক্ষিকার পাঠদান কৌশল ভালো হলেও তিনি নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। আসলেও তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে যান। এতে তাদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষিকার এই ধরনের আচরণের কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক মোঃ আঃ সত্তার বলেন,তার অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং অতিরিক্ত ক্লাস নিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

সহকারী শিক্ষিক মুহাঃ হাসিবুর রহমান বলেন, কচুয়া উপজেলার মধ্যে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এখানে প্রাক প্রাথমিক সহ মোট ৬ টি ক্লাস রয়েছে প্রতিটি ক্লাসে আলাদা শাখা রয়েছে। ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য একজন শিক্ষকের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহীদুর রহমান জানান যে, কোন ধরনের লিখিত ছুটি ছাড়াই তিনি দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত আছেন। একাধিকবার তাকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন কথার তোয়াক্কা না করে মাঝে মাঝে দু এক সময় মেডিকেল সনদ জমা দিয়ে দিনের পর দিন ছুটি কাটিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে দুমাস যাবত তার বেতন বন্ধ রয়েছে। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস বলেন, আমি ৩-৪ বছর ধরে শারীরিক ভাবে  ভীষণ অসুস্থ্য আছি। নানা উপসর্গ নিয়ে আমি বাগেরহাট খুলনা সহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছি। লিখিত কোন ছুটি আমি নেইনি এটা আমি অপরাধ করেছি। কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্যার  এবং সহকারি শিক্ষা অফিসার স্যার এর কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা পাইনি। আমার দু মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে আমি বিভিন্ন ধার দেনা করে চলছি, চাকরিটা আমার জরুরী দরকার। মুলত আমি দেরিতে যাই এজন্য স্যার আমার উপর একটু অসন্তুষ্ট থাকেন। আমার যদি চাকরি করার সুযোগ থাকে তো করব, না থাকলে কিছু করার নেই। যেহেতু সরকারি চাকরিতে আমি আইন অমান্য করেছি, আমার এখন কিছু বলার নেই। আমি অপরাধ করেছি আমি ক্ষমা চাইতে পারি। যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে চাকরি করার সুযোগ দেন, আমি চেষ্টা করব, না দিলেও আমার কিছুই করার নেই। তিনি অন্যান্য  শিক্ষকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ বদিউজ্জামান বলেন, আমি শুনেছি তিনি দীর্ঘদিন নাকি অসুস্থ আছেন। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন মূল বিষয় কি। 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মিজানুল আলম আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, আমি ২ মাস তার বেতন বন্ধ রেখেছি। আমি এখানে মার্চের ৯ তারিখ এসেছি আমার জানামতে এপ্রিল মাস থেকেই তিনি অনুপস্থিত আছেন। পূর্বের বিষয় আমি বলতে পারব না তবে আমি আসার পর থেকে উনি কোন বেতন ভাতা পাননি। আগে কোন প্রক্রিয়ায় ছুটি নিয়েছেন জানিনা, তবে আমার সময় উনি স্কুলে যান না, মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া আছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তিনি যোগদান করতে পারবেন। এছাড়া ওনার অনুপস্থিত সময় যখন ৯০ দিন হবে তখন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো । চিঠি দিয়ে ৩ বার কারণ দর্শানোর পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি বর্তমানে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত আছেন। পুনরায় চাকরিতে ফিরতে চাইলে অ-অনুমোদিত ছুটি কাটানোর সময়টা উনি কোথায় ছিলেন এটি নিষ্পত্তি করে তারপরে চাকরিতে যোগদান করতে হবে। 

সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আমাদের প্রতিনিধিকে জানান যে, উপজেলার আরও  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যা আছে। সব ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতির কারণ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
notebook

পোরশায় ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মোস্তাফিজুরের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ