মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক জন র্যাটক্লিফ। তার ভাষায়, এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেহরানের কয়েক বছর সময় লাগবে।
তবে সিআইএ প্রধান পরমাণু কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংসের দাবি করেননি। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য রয়েছে যা নিশ্চিত করে—নাতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহানে ইরানের প্রধান তিনটি পরমাণু স্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
পেন্টাগনের ভিন্ন মূল্যায়ন এবং ট্রাম্পের ক্ষোভ
পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) একটি ফাঁস হওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, “হামলার পরও ইরানের মূল পরমাণু সক্ষমতা বহাল রয়েছে।” তারা আরও জানায়, এসব স্থাপনায় হামলার ফলে ইরানের কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পেছানো হয়েছে—তাও “কম আত্মবিশ্বাসে” এই মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এই মূল্যায়ন প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “ভুয়া সংবাদমাধ্যম মিথ্যা বলছে এবং এমন তথ্য দিচ্ছে যার কোনও ভিত্তি নেই।”
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার পেন্টাগনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ-সহ সামরিক কর্মকর্তারা “আমাদের বীর মার্কিন পাইলটদের সম্মান রক্ষায়” সংবাদ সম্মেলন করবেন।
স্যাটেলাইট চিত্র ও আইএইএ’র পর্যবেক্ষণ
নতুন স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, ফোর্দো ও ইসফাহান অঞ্চলে পরমাণু স্থাপনার প্রবেশপথের আশপাশে বড় গর্ত ও বিস্ফোরণের চিহ্ন দেখা গেছে। যেহেতু এসব স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে নির্মিত, তাই আসল ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সময় লাগছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইরান হয়তো হামলার আগেই উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল।
ইরান: “আমাদের স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাই কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের পরমাণু স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এটা নিশ্চিত।” তবে তিনি এর বেশি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।
গোয়েন্দা মূল্যায়নে বিভাজন, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড সিআইএ’র মূল্যায়নের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ইরান যদি পুনর্গঠন করতে চায়, তবে তাদের তিনটি কেন্দ্রই নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।”
এই মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়নের ফলে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না হামলার প্রকৃত প্রভাব কতটা গভীর। তবে একাধিক পক্ষই ইঙ্গিত দিচ্ছে—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি।