আদিত্য কামাল'র
আষাঢ়ে গল্প
যেদিন সকাল বেলা বৃষ্টি পড়া শুরু হতো, সেদিন মনে মনে আল্লাহকে ডাকতাম। বলতাম আল্লাহ আজ যেন দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি থাকে। বৃষ্টি দুপুর পর্যন্ত থাকা মানেই স্কুল যাওয়া বন্ধ। কারণ আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে ছিল আমাদের স্কুল।
বৃষ্টি এলে পাড়ার দুষ্ট ছেলের দল মিলে কাদা পানিতে মাঠের বুকে ফুটবল খেলা! খেলা শেষে পুকুর জলে ডুব-সাঁতার খেলা। বট গাছের শাখায় ওঠে পুকুর জলে লাফিয়ে পড়া! আহা কত মধুর না ছিল সোনালি অতীত শৈশব দিনগুলো।
মনে পড়ে পাড়ার চাচা, দাদুর, আম গাছের আম আর কাঁঠাল গাছের কাঁঠাল চুরি করে খাওয়ার দিনগুলোর কথা। আষাঢ় এলে নতুন পানিতে মিলত নানা রকম ছোট্ট বড় মাছ। বন্ধুরা সবাই মিলে নতুন পানির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কারেন্ট জাল, নেট জাল, জালি, এছাড়াও গ্রাম্য আরও অনেক রকম মাছ ধরার যন্ত্র দিয়ে সবাই মিলে মজা করে মাছ ধরতাম।
আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল বড় ফসলের মাঠ তলিয়ে যেত উজানের ঢল আর আষাঢ়ের বৃষ্টিতে। সবুজ মাঠকে তখন মনে হতো বিশাল বড় কোনো সাগর যার কোনো সীমানা নেই। বন্ধুরা সবাই মিলে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে ঘুরে বেড়াতাম এগাঁও থেকে আর এক গাঁও। পানির বুকে যখন আমাদের ভেলা চলত, তখন মনের সুখে কেউ কেউ আবার গলা ছেড়ে ভাওয়াইয়া গান ধরত। আগা-নাওয়ের ডুবো ডুবো পাচা নাওয়ে বইসো, ঢোঙায় ঢোঙায় ছ্যাকং জলোরে........। আহা! কোথায় গেল সেসব অতীত দিনগুলো! কোথায় আমার শৈশব আষাঢ় আর শৈশবের বন্ধুর দল। মনে পড়ে বাবার টর্চলাইট আর কেটা দিয়ে গভীর রাতে নদীর বুকে বা ফসলি জমির হাঁটু পানিতে নেমে মাছ ধরার কথা।
আহা! আষাঢ় মাসে যখন আমাদের গ্রামের ফসলের মাঠে পানি উঠত। রাতের আকাশে খেলা করত ধবল চাঁদ। তখন যেন আমাদের গ্রামকে একটা আলোর পাহাড় মনে হতো দূর থেকে দেখে। ছলাত ছলাত পানির ঢেউয়ে যখন জোছনার আলো এসে পড়ত আহা! কী যে মায়াময় অপরূপ সে দৃশ্য! ইচ্ছা করে আবার ফিরে যায় সেই শৈশব বেলার দিনগুলোয়। আবার বন্ধুরা মিলে দাপিয়ে বেড়াই আষাঢ়ের বৃষ্টিতে। বন্ধুদের মাঝে আমি একটু বেশি সাহসী ও দুষ্ট ছিলাম। আর তাই সবার থেকে আমি বেশি বকা শুনতাম সব সময় বাবার কাছ থেকে।
এখন আষাঢ় এলেও আর বাড়িতে যাওয়া হয় না।
ছুঁয়ে দেখা হয় না আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি ফোঁটা।