ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশনের ন্যায্য দাবি
লায়ন মো. কামাল হোসেন :
আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত এবং স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ অধিভুক্ত চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি (ডেন্টাল) কোর্সের সনদধারী। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ প্রায় ১৫,০০০ (পনেরো হাজার) ডিপ্লোমাধারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
অবহেলিত, বঞ্চিত ও শ্রেণী বৈষম্যের শিকার এই বিপুল সংখ্যক সুপ্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা:
• সরকার অনুমোদিত ৮টি সরকারি ও ১০৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ কোর্স চালু রয়েছে।
• প্রতি বছর প্রায় ২,৫০০ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা শেষ করছে, ফলে দ্রুত বাড়ছে বেকারত্ব।
• কোর্স চলাকালীন দেশের স্বনামধন্য মেডিক্যাল কলেজসমূহের বিডিএস পাসকৃত ডেন্টাল সার্জন ও অধ্যাপকগণ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
কর্মসংস্থানের সংকট:
• সরকারি চাকরির জন্য মাত্র ৫১৫টি পদ রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে শূন্য মাত্র ১৪টি।
• দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না থাকায় প্রায় ৪,০০০ ডিপ্লোমাধারী বয়সসীমা অতিক্রম করে সরকারি চাকরির সুযোগ হারিয়েছে।
• বেসরকারি ডেন্টাল চেম্বারে নিয়োগের কোনো আইনগত বিধান নেই (দি মেডিক্যাল প্র্যাক্টিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুযায়ী)।
• চাকরি নেই, আবার প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অনুমতিও নেই। অথচ প্রতি বছর নতুন নতুন ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
বৈষম্য ও বঞ্চনা:
• মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টরা, যারা সমশিক্ষাগত যোগ্যতা ও সমবেতন স্কেলের আওতায়, প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। অথচ আমরা পাইনি।
• দেশে ৭৬,০০০ এমবিবিএস ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। অথচ মাত্র ৭,০০০ বিডিএস ডাক্তার থাকার পরও ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না।
• ১৯৮০ সালের বিএমডিসি আইনে জ্ঞানহীন ও অযোগ্য ব্যক্তিদেরও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য বজায় রাখা হচ্ছে।
• হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি চিকিৎসায় ডিপ্লোমাধারীরা বৈধভাবে প্র্যাক্টিস করতে পারলেও ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা সে সুযোগ পাচ্ছে না।
আইনি দিক:
• ১৯৮৩ সালে বিএমডিসি প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, তবে অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি।
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের কাজের আওতা নির্ধারণ করে রেজিস্ট্রেশনের সুপারিশ করলেও আজও সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।
• সম্প্রতি ডিপ্লোমাধারীরা মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট করে পক্ষে রায় পেয়েছে, এবং আপিল বিভাগও সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাই বৈধভাবে প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাওয়া আইনসম্মত।
জনস্বাস্থ্য ও বাস্তবতা:
• দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৭,০০০ বিডিএস দন্ত চিকিৎসক, যাদের অধিকাংশ বিভাগীয়/জেলা শহরে অবস্থান করেন।
• গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ দন্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
• বিডিএস চিকিৎসকের চিকিৎসা ব্যয় অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য অক্ষমসাধ্য।
• অন্যদিকে প্রায় ১৫,০০০ ডিপ্লোমাধারী তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানহীন অবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উপসংহার ও দাবি:
স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪২ বছরেও ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেনি।
• চাকরির সুযোগ সীমিত,
• প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অনুমতি নেই,
• অথচ পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থেকে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকা পড়তে হচ্ছে।
অতএব, দেশের জনস্বাস্থ্য ও জনগণের মৌলিক চিকিৎসা চাহিদার কথা বিবেচনা করে ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন প্রদান এখন সময়ের দাবি।