স্টাফ রিপোর্টার :
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা প্রাণী সম্পদ রক্ষায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে । বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের টনক নড়ছে না। দীর্ঘদিন থেকে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে প্রতিনিয়তই দুর দুরান্ত থেকে লোকজন হাস-মুরগী,ছাগল, ভেড়া,গরু , মহিষ ও শুকরের রোগ বালাইয়ের সেবার জন্য আসেন। মাঝে মাঝে হাসপাতালের লোকজন থাকলেও থাকে না ঔষধ। এমন ভোগান্তি নিয়ে কয়েক বার উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও সুবিধা পায়নি এলাকার প্রাণি পালনকারী ও খামারিরা। অথচ তথ্যে উঠে আসে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারণ কার্যক্রম (টিকাদান,খামার পরিদর্শন, উঠান বৈঠক) না করেই সরকারী বরাদ্ধের ঔষধ সমুহ মেয়াদোর্ত্তীন্ন হলে পশু হাসপাতালের টয়লেট ট্যাংকিতে ফেলে দেয়া হয়। হাসপাতালের র্যাকেও রাখা আছে মেয়াদ উর্ত্তিন্ন ঔষধ।
অসুস্থ ছাগল-গরুর চিকিৎসা নিতে আসা মুসলিম নগরের জেসমিন আক্তার, মোহাম্মদপুরের রফিকুল ইসলাম , কানুনগো পাড়ার দিপক চাকমা সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, গাড়ি ভাড়া দিয়ে পশু হাসপাতালে এসেও কোন লাভ হয় নাই। বরং গাড়ি ভাড়াই লস।সেবা নিতে আসায় সরকারী কোন ঔষধ না দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ লিখে বাজার থেকে কিনে নেয়ার জন্য ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেয়।
প্রাণির জন্য সেবা নিতে আসা নালকাটার অনিল চাকমা , সাওতাল পাড়ার মাহমুদ জানায় ,সরকারী হাসপাতাালে ঔষধ নাই কেনো জানতে চাইলে পশু হাসপাতালের ভিএস ডাক্তার কবির খারাপ আচরণ করেন।
মুরগী খামারী আবুল কালাম জানায়, খামারে মুরগীর বাচ্চা আনার পর থেকে বিক্রি পর্যন্ত সকল সেবায় প্রাইভেট পশু চিকিৎসক দ্বারা করতে হয়। রোগ বালাইয়ের পরামর্শের জন্য তাদের পাই না।
পানছড়ি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সুত্র মতে, জনবল কাঠামো অনুযায়ী লোক থাকার কথা ১০ জন তন্মধ্যে আছে ৫ জন । শুন্য পদ সমুহের মধ্যে - উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা -১জন। উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ ( সম্প্রসারণ) -১জন। এফ,এ,আই /উপসহকারী( কৃত্রিম প্রজনন) ১ জন।ড্রেসার ১ জন , অফিস সহায়ক ১ জন ।
বাকি ৫ জনের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন ১ জন কর্মস্থলে থাকলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। প্রায় সময়ই অফিসে পাওয়া যায় না। উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ ( সম্প্রসারণ) ৩ জনের মধ্যে ২ জন আছেন । উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ ( সম্প্রসারণ)কর্মকর্তা অরুন কান্তি চাকমা মাঠে ও অফিসে অনিয়মিত। উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ( প্রাণিস্বাস্থ্য) নাছির উদ্দিন প্রানী হাসপাতালে বসে থাকলেও ঔষধ দিতে পারেন না। ভেটেরিনারি ফিল্ড এ্যাসিস্টেন্ট শামিম আহম্মেদ নিয়োগের পর থেকেই গড় হাজির। কম্পিউটারে কাজ যানা থাকায় মাস শেষে খাতায় স্বাক্ষর করে অফিস সহকারী, কাম-কম্পিউটার অপারেটরের কাজ টুকু করে দিয়ে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেন। অফিস সহকারী, কাম-কম্পিউটার অপারেটর কমলা চরণ চাকমা কম্পিউটারের কাজ জানা না থাকায় দাপ্তরিক অন্যান্য কাজগুলো সময় সুযোগে করে দেন।
উপজেলার ৫ ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বললে চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা জানান, ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করে মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে দপ্তরের কার্যক্রম না করায় ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানেন না। প্রতিটা ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান এর সাথে সমন্বয় করে মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কার্যক্রম করতে হয় এটা করে না। মাঠের কোন কার্যক্রম নাই বললেই চলে।
ভেটেরিনারি সার্জন কবির আহাম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্টাফদের অনিয়মিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অফিস স্টাফদের অসহযোগীতার কারনে কোন কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। অফিস সহকারী, কাম-কম্পিউটার অপারেটর কমলা চরণ চাকমা কম্পিউটারের কাজ জানা না থাকায় ভিএফএ শামিম আহাম্মদকে দিয়ে কিছু কাজ করাতে হয় ,এতে করে ফিল্ডে তার যাওয়া হয় না। তাছাড়াও জনবল কম , বিষয়টি আপনারা দেখেন।
এই বিষয়ে জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার জুলফিকার আলীর কাছে মোবাইল ফোনে পানছড়ি প্রাণি সম্পদ হাসপাতালের প্রানিসেবা বঞ্চিত বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি অবগত নন জানান। বিষয়টি আমি দেখছি বলে কলটি কেটে দেন।