ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিএনপির কথার টোন মিলে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে : উপদেষ্টা নাহিদ

নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপোড়েনের মাঝে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্র্বতী সরকার নিয়ে বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সাথে মিলে যাচ্ছে’।
  • আপলোড তারিখঃ 24-01-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 16904 জন
বিএনপির কথার টোন মিলে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে : উপদেষ্টা নাহিদ ছবির ক্যাপশন: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ad728

শুক্রবার বিবিসি বাংলাকে একথা বলে নাহিদ ইসলাম বলেন। তিনি জানান, তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন।

গত বুধবার বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির অবস্থান নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য নিয়ে নতুন এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত হয়।

বিশেষত ‘বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে’ এবং শিক্ষার্থীরা  রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে ‘বেরিয়ে আসা উচিত’— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকেবিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া আসে ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ-এর প্রতিক্রিয়ার পরও
পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া অব্যাহত আছে।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত হিসেবে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এক এগারো এবং মাইনাস টু-এর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।"

অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকার গঠন হয়েছে বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই ।  করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে বক্তব্যের ব্যাপারে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন।

এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে তার ভাষায়, দেশি-বিদেশি চক্রান্তের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সাথেও সাদৃশ্য দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ‘সে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছে যে এটা অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, এর আন্ডারে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। সো একই টোনে আমরা যখন কথা বলতে দেখছি, এটা কিন্তু একটা সন্দেহের তৈরি করে।’

আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে শুক্রবারে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে 'অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার' হিসেবে উল্লেখ করে এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না এবং পরবর্তী নির্বাচন ‘একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে’ আরাফাতকে উদ্ধৃত করে পোস্ট দেয়া হয়।

নাহিদ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এটা তারা (বিএনপি) ওই উদ্দেশ্য থেকে বলেছে, কিন্তু তাদের কথার টোনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই টোনের সাথে মিলে যাচ্ছে।’

অন্যদিকে শুক্রবার দলীয় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপিকে ওয়ান ইলেভেনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিএনপি ওয়ান ইলেভেন আনার পাঁয়তারা করছে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি উল্লেখ করেন ‘এক-এগারোর যে ভয়াবহ পরিণতি তা বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করে নাই। বিএনপির নেতা-কর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে খালেদা জিয়া পর্যন্ত সবাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।
অনেক দল, অনেক ব্যক্তি টেলিভিশনে কথাবার্তা দেখে "মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর! বিএনপি কি আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে" মন্তব্য করেন  আব্বাস।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের দোসর ওই আওয়ামী লীগ, তাদের দিকে বিএনপিকে যারা ঠেলে দিতে চায়, আমি বলব তারা নিজের চেহারাটা আয়না দিয়ে দেখুন।  আয়না দিয়ে  নিজের অন্তরটাকে দেখুন, দেশবাসীকে আজকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না।’

গত দেড় দশকে দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সবাই যেভাবে নিপীড়িত হয়েছেন তার উদাহরণ টেনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান? আমাদেরকে ভারতের দালাল বানাতে চান? এই কথা কখনও চিন্তা করবেন না।’

জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় বিএনপির দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা আব্বাস।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাজারমূল্যের দিকে সরকারের দৃষ্টি না দেয়া বা প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে তার জন্য কি কোনো সমালোচনা করা যাবে না? তাহলে কীসের ভয় দেখান যে এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি হবে?

বিচার কার্যক্রম, সংস্কার, ও নির্বাচন এসবগুলোই বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার হলেও ‘বিএনপি কেন জানি মনে করে এই সরকারটা হয়েছে কেবল একটি নির্বাচন দেয়ার জন্য’—বিবিসিকে বলেন নাহিদ ইসলাম।

আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে অবশ্য নাহিদ বলছেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারকে তো আমরা নিরপেক্ষই মনে করছি। বিএনপি কেন মনে করছে না নিরপেক্ষ আচরণ, বিএনপির এটা স্পষ্ট করা উচিৎ।’

নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে এসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা সম্ভব বা কোনো অভিযোগ থাকলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেটা তখন সরকার বিবেচনায় নিতে পারবে এমনটাও বলেন তিনি।

একই সাথে ‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা সাংবিধানিক পদে যদি বিএনপিপন্থী লোকজন থাকে, সেটাও নিরপেক্ষতা লাগবে কিনা, তাহলে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এখন তো এটার সময় আসেনি’ উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।

অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম অবশ্য বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কনডাক্ট করা পর্যন্ত থাকবেন। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।" নিরপেক্ষতার প্রশ্ন সামনে আসতে পারে উল্লেখ করেছেন সরকারে থাকা অবস্থায় ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে।
এখনকার পরিস্থিতিতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি এর উত্তরে 'না' বলেছিলেন।

বিএনপির দিক থেকে যদিও এসব নিয়ে আরও নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার উল্লেখ করেছেন, সব পক্ষের সমর্থনে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হলেও "যখন শুনি আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, এ যেন মনে হয় শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি। কারণ, শেখ হাসিনা বলতেন আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র।"

অন্তর্র্বতী সরকারের কারও মুখে সেটা শোভা পায় না বলে মনে করেন রিজভী।

এছাড়া এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি বছরের পর বছর রাজপথে লড়াইতে থেকেছে, "কোনটাকে সমর্থন করতে হবে, কোনটাকে নয়, কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে এটা কি আজকে উপদেষ্টারা দেশের প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদেরকে শেখাবেন? আমাদের সকল আস্থা তো আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের কথা হলো গড়িমসি কেন? কেন ডেডলাইন নেই? কেন হাসিনার কথার পুনরাবৃত্তি হবে?"

মির্জা আব্বাস বলছেন, "অনেকে বলেন বিএনপি শুধু নির্বাচন-নির্বাচন করে। আরে ভাই নির্বাচন-নির্বাচন করি না। খামাখা এসমস্ত আজেবাজে কথা আপনারা বইলেন না।"
বিএনপি সম্প্রতি 'দ্রুত নির্বাচন' দেওয়ার কথা বলেছেন। আগামী জুলাই-আগস্টেও নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এনিয়ে অবশ্য নাহিদ ইসলাম বলছেন, এবছরের শেষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা দিয়েছেন তাতে অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদকাল এবং নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, সে পর্যন্ত ধৈর্য রেখে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো প্রয়োজন।

যখন গুম বা জুলাই গণহত্যার বিচার কার্যক্রম এবং সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে, "হয়তো সামনের মাসেই আলোচনা, নেগোসিয়েশন, বারগেনিং (দরাদরি) শুরু হবে।তখন বিএনপির বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের আলাপগুলোতে মনোযোগী হওয়া উচিৎ, বিচার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা উচিৎ, অথচ সে সময় তারা বলছে এ সরকারের চেয়ে নিরপেক্ষ একটা সরকার প্রয়োজন।"

নানা বাদানুবাদ থাকলেও নাহিদ ইসলাম এবং মির্জা আব্বাস, দুজনই দেশ গঠনে সংঘাত বা বিভেদ সৃষ্টি না করার কথা বলেছেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ নিউজ ডেস্ক

কমেন্ট বক্স
notebook

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির অধীনে রাখার দাবীতে শরীয়তপুরে মানববন্ধন