গদ্য কবিতা: “এ কেমন আইন?”
-আমিনুল হক নজরুল
রাত্রির গভীরে এক বাবা নিঃশব্দে কাঁদে,
তার চোখে ঘুম আসে না,
আসে কেবল ফেলে যাওয়া সন্তানের মুখ।
যে সন্তান একদিন বাবার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়তো,
আজ আইন নামের এক শীতল কাগজে-
তার নামটাই শুধু বাকি।
যে নারী একদিন শপথ নিয়েছিলো আগুনের চারপাশে,
প্রেমে, বিশ্বস্ততায়, জীবনের প্রতিটি দুঃসময়ে-
পাশে থাকার প্রতিজ্ঞায়,
সে নারীই একদিন নিজের গর্ভে ধরা-
রক্তের সম্পর্ক ফেলে অন্য এক পুরুষের কাঁধে ঠাঁই নেয়,
আর সেই পুরুষও যখন ক্লান্ত হয় সম্পর্কের বোঝায়,
সে নারী ফের ফিরে আসে কোর্টের চৌকাঠে,
আইনের ঠাণ্ডা দরজায় কড়া নাড়ে,
বলে— “সন্তান আমার, আমি মা।”
কিন্তু কোর্ট কি জানে,মাতৃত্ব কেবল রক্তের নয়,
মাতৃত্ব যত্নে, নিদ্রাহীন রাতের চোখে,
ভাতের শেষ গ্রাসটি-
বাচ্চার মুখে তুলে দেওয়ার নিঃশব্দ ত্যাগে?
যে বাবা বুক আগলে রাখে সন্তানের হাসি,
তার চোখের পানি কি আইনের পাতায় স্থান পায় না?
বিচারের দাঁড়িপাল্লা আজ কেমন ভারসাম্য হারিয়েছে,
যেখানে মায়ের অশ্রু দেখা যায়,
কিন্তু বাবার কান্না নেই কোনো ধারায়,
যেখানে পরকীয়া ভুল নয়, দায় হয় ভালোবাসার,
যেখানে মায়ার নামে কেড়ে নেওয়া হয়-
একজন বাবার শেষ সম্বল-তার সন্তান।
এ কেমন আইন?
যে আইন অন্ধ, কিন্তু অন্ধত্বে নারীকে দেয় ছায়া,
আর বাবাকে ঠেলে দেয় এক নিঃসঙ্গ শূন্যতার দিকে।
রাত শেষে যখন পৃথিবী ঘুমায়,
একজন বাবা তখনও জেগে থাকে,
দেয়ালের ছবিটাকে দেখে বলে-
“বাবা তোমায় খুব ভালোবাসে,
কিন্তু এই আইন তো বাবার ভালোবাসা বোঝেনা।”