অষ্টগ্রাম প্রস্তাবিত বাংলাদেশের ৬৫তম জেলা
(হাওর জেলা)
১. ভূমিকা:
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে নদী ও হাওরবেষ্টিত অঞ্চল। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলা এই হাওরাঞ্চলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। হাওরবাসীর জীবনযাত্রা, অর্থনীতি, যোগাযোগব্যবস্থা ও প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কারণে অষ্টগ্রামকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র হাওর জেলা গঠনের প্রস্তাব দীর্ঘদিনের দাবি।
২. পটভূমি ও প্রেক্ষাপট:
অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলার একটি অংশ মিলে বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখের বেশি, এবং তাদের জীবনযাপন মূলত কৃষি, মৎস্য ও হাওরনির্ভর। বর্ষাকালে সম্পূর্ণ অঞ্চলটি পানিবেষ্টিত হয়ে দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ফলে প্রশাসনিক সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাজারব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
৩. ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত তথ্য: (প্রস্তাবিত জেলা এলাকা অনুযায়ী)
উপাদান বিবরণ:
মোট আয়তন প্রায় ৯৫০ বর্গকিলোমিটার
প্রস্তাবিত উপজেলা ১) অষ্টগ্রাম ২) মিঠামইন ৩) ইটনা ৪) নিকলী ৫) বাজিতপুর (আংশিক)
জনসংখ্যা আনুমানিক ১০–১২ লক্ষ
অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশে, ঢাকা বিভাগে
অর্থনীতি ধান, মাছ, গবাদিপশু, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নৌযান শিল্প।
৪. অষ্টগ্রাম জেলা ঘোষণার পক্ষে যুক্তিসমূহ:
(ক) ভৌগোলিক স্বাতন্ত্র্য:
অষ্টগ্রাম পুরোপুরি হাওরাঞ্চলে অবস্থিত, যা দেশের অন্য কোনো প্রশাসনিক এককের সঙ্গে স্থলভিত্তিকভাবে সংযুক্ত নয়। প্রাকৃতিকভাবে এটি একটি স্বতন্ত্র জলভূমি এলাকা।
(খ) প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন:
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে অষ্টগ্রামে পৌঁছাতে নদী ও সড়ক পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় (৬০–৭০ কিলোমিটার)। এতে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বিলম্ব হয়।
(গ) হাওরভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার কার্যকারিতা:
স্বতন্ত্র জেলা হলে “হাওর উন্নয়ন বোর্ড”, “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর” এবং “পর্যটন কর্পোরেশন”-এর কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
(ঘ) অর্থনৈতিক সম্ভাবনা:
অষ্টগ্রাম হাওরে বিপুল মৎস্য সম্পদ, কৃষিজমি, ও পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা হিসেবে গঠিত হলে Blue Economy–র আওতায় হাওর-নির্ভর মৎস্য ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন সম্ভব হবে।
(ঙ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষা:
হাওরবাসীরা প্রতি বছর বন্যা, জলাবদ্ধতা ও নদীভাঙনের শিকার হয়। আলাদা জেলা প্রশাসন থাকলে দ্রুত ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে।
(চ) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
অষ্টগ্রাম হাওর সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। লোকসংগীত, নৌকাবাইচ, পিঠা উৎসব, এবং বর্ষার জীবনযাত্রা একে দেশের ঐতিহ্যের অংশ করেছে।
৫. প্রত্যাশিত ফলাফল:
প্রশাসনিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।
হাওরভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ত্বরান্বিত হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত অগ্রগতি আসবে।
পর্যটন ও মৎস্যভিত্তিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
হাওর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।
৬. প্রস্তাবিত সদর:
অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরকে প্রস্তাবিত জেলার সদর হিসেবে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে, কারণ এটি ভৌগোলিকভাবে মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত এবং ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, থানা, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
৭. উপসংহার:
অষ্টগ্রাম কেবল একটি উপজেলা নয়; এটি বাংলাদেশের হাওর জীবনের প্রতীক। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে “অষ্টগ্রামকে হাওর জেলা হিসেবে ঘোষণা” সময়ের দাবি।
এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে এটি হবে দেশের প্রথম হাওরকেন্দ্রিক জেলা, যা টেকসই উন্নয়ন, নীল অর্থনীতি, ও পরিবেশ সংরক্ষণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
শুভেচ্ছান্তে:
সাংবাদিক নজরুল ইসলাম সাগর,
সম্পাদক : জার্নাল অব কান্ট্রি বিডি. কম
সভাপতি : অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাব।
সাধারণ সম্পাদক : বাংলাদেশ পেশাদার সাংবাদিক ফোরাম, কিশোরগঞ্জ।