অধ্যাপক আবুল হোসেন ভূঞা:
🔲 যাকাত আদায়ের জন্য সর্বোত্তম মাস হচ্ছে রমাদান মাস, যেই মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াবকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। তাই রমাদান মাসে হিসাব করে যাকাত আদায় করুন, ফরজ বিধান আদায়ের পাশাপাশি ৭০০ গুন পর্যন্ত দান করার সওয়াব নিশ্চিত করুন।
🔸 স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হচ্ছে সাড়ে সাত ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হচ্ছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। কারো কাছে এই পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা রুপা অথবা রূপার নিসাব পরিমান টাকা অর্থাৎ (বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী) ৯৫ হাজার টাকা থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। [সহীহ বুখারী- ১৪৪৭, মুসলিম- ৯৭৯]
🔹 যদি সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা কিংবা ব্যবসায়িক পন্যের কোনোটিই আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসব মিশ্রিত সম্পদগুলো একত্র করার পর যদি তা সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য অর্থাৎ ৯৫ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এই সকল সম্পদকে একত্রে হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। [মু. আ. রাযযাক ৭০৬৬]
🔸 যাকাত ফরজ হয়েছে এমন সম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ [শতকরা ২.৫%] হারে যাকাত আদায় করা ফরজ।
🔹 যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, গচ্ছিত সম্পদ গুলো ঋণ অতিরিক্ত হতে হবে এবং তা পূর্ণ ১ বছর নিজের কাছে থাকতে হবে।
⭕ উদাহরণস্বরূপ কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া হলোঃ-
▪️কারো কাছে নগদ ২ লক্ষ টাকা, ১ লক্ষ টাকার স্বর্ণ এবং ৫০ হাজার টাকার রূপা আছে এবং তা ১ বছর পর্যন্ত নিজের কাছে গচ্ছিত অবস্থায় আছে এবং তার কোনো প্রকার ঋণ নেই। তাহলে তার এই ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
▪️আবার কারো কাছে নগদ ৩ লক্ষ টাকা, ২ লক্ষ টাকার স্বর্ণ এবং ২০ হাজার টাকার রূপা আছে, পাশাপাশি ২.৫ লাখ টাকা ঋণ আছে। তাহলে এই ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা থেকে ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকার উপর যাকাত দিতে হবে।
▪️কারো কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকা, ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ এবং ৫০ হাজার টাকার রূপা আছে, পাশাপাশি ২ লক্ষ টাকা ঋণ আছে। তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে না বরং ঋণ আদায় করা ফরজ হবে ✅
🔲 মোট কথা হচ্ছে, কারো কাছে যদি স্বর্ণ, রূপা, নগদ অর্থ কিংবা ব্যবসায়িক পন্যের কোনোটি পৃথক পৃথকভাবে নিসাব পরিমান না থেকে থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে না।
⭕ তবে যদি প্রতিটি সম্পদই কিছু কিছু করে থাকে যা কিনা একত্র করলে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমমূল্য অর্থাৎ ৯৫ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এই মিশ্রিত সম্পদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে।
🔸 প্রতি ভরি স্বর্ণ অথবা রূপার বিক্রয়মূল্যের উপর যাকাত নির্ধারণ করতে হবে, ক্রয়মূল্যের উপরে নয়। অর্থাৎ বর্তমানে স্বর্ণের বিক্রয়মূল্য যদি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হয়, তাহলে প্রতি ভরি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ধরে মোট স্বর্ণের দাম নির্ধারন করে তার উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
🔹 যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে যাকাত আদায়ের পূর্বে নিয়ত করা জরুরী। অর্থাৎ মনে মনে স্মরণ করা যে উনাকে যাকাতের টাকা থেকে দান করা হলো। আর যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাত গ্রহীতাকে এই কথা বলার প্রয়োজন নেই যে, এটা যাকাতের টাকা। বরং মালিক যাকাতের নিয়ত করে টাকা প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে ✅
🔲 যাদের উপর যাকাত ফরজ নয় এমন অসহায়, গরীব আত্বীয়-স্বজন, এতীম, মিসকিন, ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে গরীব, অসহায় আত্বীয়-স্বজনদের হক বেশি। [সূরা তওবা- ৬০]
🔸 তবে যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই, যাদের মাধ্যমে আমরা এসেছি এবং যারা আমাদের মাধ্যমে আসবে। যেমন- মা বাবা, দাদা দাদী, নানা নানী, নিজের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনী ইত্যাদি।
🔹 অমুসলিমদেরকে এবং মসজিদ ফান্ডে (মসজিদ নির্মান কাজে) যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই। [আ. রাযযাক- ৭১৬৬]
⭕ ব্যবহৃত সম্পদ অর্থাৎ বাড়ি-ঘর, টিভি, ফ্রিজ, ব্যবহৃত গাড়ি এসব যদি লক্ষ টাকার উপরেও বিদ্যমান থাকে, তবুও এসবের উপর কোনো প্রকার যাকাত আদায় করতে হবে না
🔸 তবে স্বর্ণ এবং রূপা ব্যবহৃত হোক কিংবা অব্যবহৃত স্বর্ণ এবং রূপার নিসাব পূরণ হলেই যাকাত আদায় করতে হবে।
🔲 যাকাত হচ্ছে ফরজ ইবাদত সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম ফরজ ইবাদত এবং তা হচ্ছে গরীবের হক। যাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং সম্পদে বহুগুনে বরকত বৃদ্ধি পায়। তাই যথাযথভাবে যাকাত আদায় করুন এবং ফরজ বিধানের পাশাপাশি গরীবের হক রক্ষা করুন ইন শা আল্লাহ
🔹 মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন।