আমিনুল হক,নিজস্ব প্রতিনিধি:
এখনো সমাজে এমন অনেক অসহায়-নিঃস্ব মানুষ আছেন, যারা সেহেরি ও ইফতারে খাবার জোগাড়ে হিমশিম খান।বছরের অন্য সময়ে যেমনই হোক বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় তারা আরও দুর্ভোগ-দুর্দশায় আছেন। অনেকে লজ্জায় কারো কাছে চাইতেও পারেন না। এমন মানুষদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মানুষের নৈতিক ও সামাজিক কর্তব্য। এমনই বাস্তবতায় দুস্থ রোজাদারদের পাশে 'বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এবারও দেশব্যাপী ‘১ টাকায় রোজার বাজার’ পরিচালনা করছে।
চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় প্রতিদিনই হাজারো ছিন্নমূল রোজাদারদের ইফতার-সেহেরি খাওয়ানোর সাথে সাথে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর জন্য ১ টাকায় বাজার দিচ্ছে সংগঠনটি।
আজ সোমবার (১০মার্চ)সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম নগরের বিপ্লব উদ্যানে এই বাজার উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন।
সিটি মেয়র বলেন, ‘বিদ্যানন্দের আজকের এই উদ্যোগে এসে আমার মনে হচ্ছে শায়েস্তা খাঁর আমল ফিরে এসেছে। অভাবি অসহায় মানুষজনে এখান থেকে ১ টাকায় হাজার টাকারও বেশি পণ্য বাছাই করার স্বাধীনতা পাচ্ছে। এই আইডিয়া অভাবনীয় প্রশংসার দাবি রাখে। বিদ্যানন্দকে দেখে যদি সমাজের অন্যান্য বিত্তবানেরা মানুষের পাশে এগিয়ে আসেন; তাহলে এই রমজানে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
সরেজমিনে যা দেখা যায়;চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে নিম্নআয়ের মানুষজন উৎসবমুখর পরিবেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। সবারই চোখেমুখে হাসি। কারণ কোনো ভিক্ষা নয়, মাত্র ১ টাকা দিয়ে তারা নিজেদের পছন্দে হাজার টাকার বাজার করার সুযোগ পেয়েছেন। তারা ১টাকায় পাচ্ছে চাল-ছোলা ডাল তেল ডিমসহ ২১ রকমের পণ্য। যেন একটি পরিপূর্ণ সুপারশপ! পাওয়া যাচ্ছে ১ কেজি চাল ১ টাকায়, ১ কেজি ছোলা ২ টাকায়, ১ ডজন ডিম ২ টাকায়, ১ লিটার তেল ৪ টাকায় কিংবা ১টি মুরগী ৬ টাকায়।এখানে প্রত্যেকে মাত্র ১ টাকা দিয়ে ২০টি টোকেন মানি পান। যেটি দিয়ে তারা বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে বাজার করার সুযোগ পান। আর বাজারের সিস্টেম বুঝিয়ে দিতে পযাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।
বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির পরিচালক জামাল উদ্দিন জানান, মাহে রমজানকে বলা হয় সহমর্মিতার মাস। কেননা এই এক মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে রোজাদার ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে করা যায়।আর তাতে অন্তরে আর্ত-পীড়িত ও ব্যথিত মানব-গোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা জাগে।
তিনি বলেন,রোজাদারেরও উচিত তার এই জাগ্রত সহানুভূতিকে কাজে লাগানো এবং তাদের ব্যথা উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা। তা বুদ্ধি-পরামর্শ ও কায়িক সহযোগিতা এবং দান-দক্ষিণা বিভিন্নভাবেই হতে পারে।
তিনি আরও জানান,বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও তার স্বেচ্ছাসেবী দাতারা সেই কাজটিই বছরের পর বছর করে যাচ্ছে।আজকে এ বাজারে ৫ শতাধিক দরিদ্র পরিবার ১ টাকা দিয়ে কমপক্ষে ১০০০ টাকার বেশি নিত্যপণ্য নিতে পারবেন,যা তাদের এই দুঃসময়ে একটু হলেও স্বস্তি নিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।অনুষ্ঠানে ছিলেন পাঁচলাইশ থানার ওসি মো: সোলেমান,ও মেয়রের একান্ত সচিব মারুফুল হক মারুফ, রাজনৈতিক সচিব জিয়া উদ্দিন।