ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সাত মাসে ২২০জন জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদসহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে গত সাত মাসে অন্তত ২২০জন জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
  • আপলোড তারিখঃ 19-05-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 67997 জন
সাত মাসে ২২০জন জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
ad728

 আমিনুল হক, নিজস্ব প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদসহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে গত সাত মাসে অন্তত ২২০জন জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ধরে নিয়ে যায় ১৫১ জনকে।যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় কয়েক দফায় তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। 


স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, অপহৃত কয়েকজন জেলের খোঁজ এখনও পাচ্ছে না পরিবার। সর্বশেষ ১২ মে নাফ নদে আরাকান আর্মির হামলায় দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময়ে তিনজন জেলে অপহরণের শিকার হন। ৮ এপ্রিল চারটি ট্রলারসহ ২৩জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। 

আরাকান আর্মির জিম্মিদশা থেকে ফেরত এসেছেন এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায়, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মো. আইয়ুব জানান, ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা হয়ে টেকনাফের জেটিঘাটে ফিরছিল তাদের ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ ছিল ট্রলারে। হঠাৎ সাত ব্যক্তি এসে অস্ত্রের মুখে ট্রলার আটকায়।সে যে ট্রলার ছিলেন, সেখানে মাঝিসহ ৯ বাংলাদেশি জেলে ছিলেন। ট্রলারে উঠে অস্ত্রধারীরা সবার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে।তাদেরকে রাত ৮টার দিকে মিয়ানমারের মংডুতে নিয়ে হাত ও চোখ খুলে দেয়। অস্ত্রধারীরা পরে তাদেরকে আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করে এবং হাজতখানার মতো জায়গায় রাখা হয়। 

তিনি আরও জানান, সেখানে একটি রুমে ৩১জন বাংলাদেশি ছিলেন। সব মিলিয়ে ২০০ থেকে আড়াইশ বন্দি। দুই বেলা ভাত দেওয়া হতো। ভাতের সঙ্গে কলাপাতায় কাঁঠালের এঁচোড় সরবরাহ করত। কোনো হলুদ, মরিচ বা লবণ ছিল না। লবণ চাইলেও মারধর করা হতো। 

তার দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা বলত, বাংলাদেশ থেকে চাল, ডাল, হলুদ, মরিচ, লবণ, পেঁয়াজসহ খাবার পাঠালে বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। রাতে তাদের কক্ষে কোনো আলো থাকত না বলে জানান তিনি।একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ৪১ দিন কাটিয়েছেন তারা। ট্রলার মালিক ফয়সালের যে ট্রলার আরাকান আর্মি নিয়ে গিয়েছিল, সেটি তারা নিয়ে আসেন বলেও জানান। 

তাদের আটকের খবর পরিবার কীভাবে জানতে পেরেছে– এমন প্রশ্নে আইয়ুব বলেন, ধরার পরপরই সবার নাম-ঠিকানা লিখে নেয় আরাকান আর্মি। শুনেছি এর পর ওই খবর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে দেয় তারা নিজেরাই। আর আমাদের পরিবারের লোকজন পুলিশ, বিজিবিসহ সবার কাছ গিয়ে ছাড়িয়ে আনার অনুরোধ করেছে। 

তিনি আরও জানান, গেল রমজানে নাফ নদে একসঙ্গে চারটি বাংলাদেশি ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মিরা।পরে ট্রলারপ্রতি ২ লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনে মালিকপক্ষ। 

১২ মে টেকনাফের আরাকান আর্মির গুলিতে দুই জেলে গুলিবিদ্ধ এবং তিন জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন– টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার হেদায়েত উল্লাহ (১৮) ও মো. হোসেন (১৬)। 

হেদায়েত উল্লাহ জানান, ‘আমরা পাঁচজন নাফ নদে বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে যাই। হঠাৎ মিয়ানমারের দিক থেকে আমাদের শরীরে গুলি লাগে। এ সময় আমরা চিৎকার দিলে বাকিরা পালিয়ে যায়। আমাদের দু’জনের পা-হাতে গুলি লাগে। আমরা কিন্তু বাংলাদেশে জলসীমানায় ছিলাম।তারা সীমান্ত চৌকি থেকে আমাদের গুলি করে। কোনো কারণ ছাড়া তারা গুলি করেছে। এখন ভয়ে নাফ নদে মাছ শিকারে যাচ্ছি না।’ 

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ নৌঘাটে সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর জানান, ‘আগের তুলনায় নাফ নদে মাছ শিকার করা খুব কঠিন হয়ে গেছে। এখন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে অনেকে পেটের তাগিদে নাফ নদে নামছে। আবার অনেক সময় জেলেরা জলসীমানা অতিক্রম করার কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’ 

বিজিবির রামুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ সমকালকে জানান, ‘জলসীমানা লঙ্ঘন করলে জেলেদের আটকে রাখে আরাকান আর্মি। ইনফরমাল যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা তাদের ছাড়িয়ে আনছি। তবে এটা শুনতে পাচ্ছি, আরাকান আর্মি ওপার থেকে খাবার যাবে– এমন প্রত্যাশা করে। তাদের খাবার সরবরাহ করার কোনো সুযোগ নেই। মাদক ও রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে নাফ নদে মাছ ধরা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এখনও অনেকে ককসিটে ভেসে ভেসে মাছ ধরে। ভুলবশত যদি নাফের মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যায়, এর সুযোগ নেয় আরাকান আর্মি। 


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

নবীনগরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৫ শহীদের সমাধিতে শ্রদ্ধা