ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় একদিনে কমপক্ষে ১২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিশু, নারী ও ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীরা। আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে জানায়, বুধবার (২৫ জুন) দিনভর গাজার বিভিন্ন এলাকায় চালানো ভয়াবহ বিমান ও স্থল হামলায় এ প্রাণহানি ঘটে।
বিস্তারিত হামলার বিবরণ:
-
পূর্ব গাজার শাজাইয়া এলাকায় দুটি বিমান হামলায় ১৭ জন নিহত, এর মধ্যে ২ শিশু।
-
একই এলাকায় আরও একটি বাড়িতে হামলায় ১২ জন নিহত, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
-
গাজা শহরে দুটি পৃথক হামলায় নিহত ৬ জন ও ৯ জন, দ্বিতীয়টির মধ্যে ৪ শিশু।
-
আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে বিমান হামলায় ৫ শিশুসহ ৯ জন নিহত।
-
নেৎজারিম করিডোরে সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে ৮ জন নিহত।
-
রাফাহ শহরের পশ্চিম অংশে সহায়তা প্রত্যাশীদের ওপর গুলিতে নিহত ৩ জন।
-
উত্তর-পশ্চিম গাজায় এক বাড়িতে গোলাবর্ষণে এক মা ও তার দুই সন্তানসহ ৫ জন নিহত।
-
জাবালিয়া আল-নাজলায় দুটি বাড়ি ধ্বংসের পর ৩টি মরদেহ উদ্ধার; অনেকে ধ্বংসস্তূপে আটকা।
-
দেইর আল-বালাহ ও নুসাইরাত ক্যাম্পে দুটি বাড়িতে বিমান হামলায় ১০ জন নিহত।
-
আবাসান শহরে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে এক তরুণের মরদেহ, সহায়তা নিতে আসা আরও ৫ জন নিহত।
-
জাবালিয়া আল-বালাদে ওমারি মসজিদের কাছে জড়ো হওয়া জনতার ওপর বিমান হামলায় নিহত ২ জন।
২০ মাসে নিহত ৫৬ হাজারেরও বেশি, থামেনি হামলা
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৬,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
যদিও বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ অব্যাহত, তবু ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
২০২৪ সালের নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াওভ গালান্তের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে।
মানবিক বিপর্যয়ের গভীরে গাজা
গাজায় খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুতের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। আহতদের চিকিৎসায় সংকটে রয়েছে হাসপাতালগুলো।
আন্তর্জাতিক নিন্দা ও আহ্বান
জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি, মানবিক করিডোর এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।