ক্ষিধা এক আর্তনাদ
(গদ্য কবিতা)
-আমিনুল হক নজরুল
রাতে কেউ একজন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুমোয় না,
সে জেগে থাকে,তার ভেতরে আগুন জ্বলে।
শহরের আলো তাকে ডাকে না,
কবিতার পৃষ্ঠা তার কাছে কাগজ মাত্র;
সে চিবিয়ে খায় শব্দ,গিলে ফেলে ছন্দ,ভুলে যায় মানুষ।
ক্ষুধা যখন আসে,
তখন পৃথিবী এক অদ্ভুত অন্ধকারে ঢেকে যায়,
সেখানে ন্যায়-অন্যায়,মায়া-মমতা,প্রেম-
সবই মুছে যায় ধীরে ধীরে,
যেন জোছনার আলোয় বিলীন হয় মৃত পাতার ছায়া।
ক্ষুধা এক মহান ঔষধ,
যা-সবকিছু ভুলিয়ে দেয়।
ভুলিয়ে দেয় বুকের সমস্ত সুর,
ভুলিয়ে দেয় ইতিহাসের পৃষ্ঠা,
ভুলিয়ে দেয় নিজের মুখটাও আয়নায়।
আমি তখন কেবল এক দেহ,
আগুনে জ্বলা দেহ;
আমার সমস্ত কাব্য মুছে যায় ক্ষুধার জ্বালায়।
ভালোবাসা তখন সস্তা হয়ে যায়,
বিক্রি হয়ে যায় এক মুঠো ভাতের দামে।
কবিতার ডায়েরি ছিঁড়ে ফেলি,
কালি মিশে যায় জলের সঙ্গে।
আমি জানি-তোমরা বুঝবে না।
ক্ষুধার যন্ত্রণা বোঝা যায় না শব্দে,
বোঝা যায় না আলোয়;
বোঝা যায় কেবল অন্ধকারের গন্ধে,
যেখানে মানুষ কেবল বাঁচতে চায়,আর কিছু নয়।
ক্ষুধা! তুমি সেই ঔষধ,
যে আমার সমস্ত মানবতাকে নিঃশেষ করে দিয়েছ;
তবু তোমার আগুনেই আমি আজও বেঁচে আছি।