ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শাহবাজ সানীর প্রয়াণ: সিন্ডিকেটের শিকার, অবহেলা ও অভিমানে অকাল মৃত্যু*

বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে তরুণ অভিনেতা শাহবাজ সানীর অকাল মৃত্যু তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তাঁর মৃত্যু শুধু একজন অভিনেতার বিদায় নয়, বরং নাট্যাঙ্গনে বিরাজমান সিন্ডিকেট ও অবহেলার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই মেধাবী এই অভিনেতা কাজের অভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি চেষ্টা করে গেছেন, কিন্তু শখের কাজ এবং ক্যারিয়ারের পথ মসৃণ হয়নি।
  • আপলোড তারিখঃ 18-02-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 12509 জন
শাহবাজ সানীর প্রয়াণ: সিন্ডিকেটের শিকার, অবহেলা ও অভিমানে অকাল মৃত্যু* ছবির ক্যাপশন: প্র‍য়াত শাহবাজ সানী
ad728


রেজা, নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে তরুণ অভিনেতা শাহবাজ সানীর অকাল মৃত্যু তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তাঁর মৃত্যু শুধু একজন অভিনেতার বিদায় নয়, বরং নাট্যাঙ্গনে বিরাজমান সিন্ডিকেট ও অবহেলার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই মেধাবী এই অভিনেতা কাজের অভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি চেষ্টা করে গেছেন, কিন্তু শখের কাজ এবং ক্যারিয়ারের পথ মসৃণ হয়নি।

একসময় ইমরান রবিনের নাটকে অভিনয় করা সানী, নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দারুণ সম্ভাবনার পরিচয় দিয়েছিলেন। রবিন সানীর প্রয়াণের পর তার একটি আবেগময় স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "সানীর অকাল মৃত্যু আবারও প্রমাণ করল আমাদের সময় যখন তখন শেষ হয়ে যাবে। কী হবে এত সিন্ডিকেট, অহংকার আর অভিশাপ দিয়ে... সময় তো অল্প।" অন্যদিকে পরিচালক আমিনুল শিকদারও একই মন্তব্য করেন, "মানুষ মারা গেলে কদর বেড়ে যায়," একথা লিখে তিনি নাট্যাঙ্গনের দুঃখজনক বাস্তবতাকে সামনে আনেন।

এই বিষয়টি নিয়ে ইমরান রবিন বলেন, "এই সময়ে চরিত্র অভিনেতাই নয়, পরিচালকসহ সবার জন্য সিন্ডিকেট প্রকট আকার ধারণ করছে।" সানী ছিলেন একজন শিল্পী, যিনি অনেক শিল্পীর মতো কোন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিলেন না। তাই সিন্ডিকেটের কারণে তার কাজের সুযোগ কম ছিল। "তার জন্য যদি কেউ নিঃস্বার্থভাবে কিছু করত, তাহলে সে মানসিকভাবে আরও ভালো থাকত," রবিন আরো যোগ করেন।

মোহন আহমেদ, যিনি সানীর সঙ্গে বেশ কিছু নাটকে কাজ করেছেন, তার কথায় "সানী একজন ভালো অভিনেতা ছিল, কিন্তু কুড়িয়ে পায়নি তাঁর প্রাপ্য সম্মান।" সানী সর্বশেষ যে নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, সেটি ছিল "জামাইয়ের মাথা গরম," যা তার জীবনের শেষ নাটক হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে তার সহকর্মীদের। সানী জীবনের শেষ সময়েও অগ্রগতির জন্য সংগ্রাম করছিলেন, এবং একসময় খিলক্ষেতে একটি রেস্টুরেন্ট খোলার চেষ্টা করেছিলেন।

এদিকে, সানীর শেষ নাটকের নির্মাতা প্রিন্স রোমান ও রাকিব চাকলাদার আজকের সংবাদকে জানান, সানী যখন শেষবার তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন সে প্রচণ্ড কাশছিলেন। তার হঠাৎ অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, এবং সেখানেই সানী মৃত্যুবরণ করেন। রাকিব চাকলাদার বলেন, "সে নাট্যাঙ্গনে পলিটিকসের শিকার ছিল, তাকে কখনো প্রধান চরিত্রে সুযোগ দেওয়া হয়নি।"

সানী নিজে একসময় লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, এবং অনেক কষ্টের পরও নাট্যাঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন। পরিচালক আরমান রহমান জানান, "প্রতিভার মূল্য আমাদের দেশে খুব কম। সানী অভিনেতা হিসেবে ভালো ছিল, কিন্তু কখনো যথাযথ সাড়া পায়নি।"

দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালক ইমরাউল রাফাত সানীকে সহায়তা করেছেন এবং ফেসবুকে তার জন্য আবেগপ্রবণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন, "সানী কখনো দয়ায় বা চাটুকারিতায় অভিনেতা হননি। সে নিজের কাজ দিয়ে ভালোবাসা পেয়েছে, এবং তা নিয়েই চলে গেছে।"

সবশেষে, সানীর মা অসুস্থ এবং তাঁর দুই ভাই-বোন রয়েছে। আজ বাদ জোহর সানীকে লক্ষ্মীপুরে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। এই অকাল মৃত্যু নাট্যাঙ্গনের জন্য এক বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে প্রতিভার কদর কম, এবং সিন্ডিকেটের শিকার হতে হয় মেধাবী শিল্পীদের।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

৬০ বিজিবি’র খাদলা বিওপির অপারেশনাল কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন