রফিকুল ইসলাম খান, গফরগাঁও প্রতিনিধিঃ:
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুল জব্বারের নামে এডিপির অর্থায়নে জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ২০০৮ সালে তারই জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়াতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানে শহীদের ছবি ছাড়া ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি নেই জাদুঘরের ভেতরে। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটিতে ৪ হাজার ১৭১টি বই রয়েছে।
গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈত্রিক ভিটার পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানেই রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শহীদ জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা বছর সরব না থাকলেও ভাষার মাসে মিলন মেলায় পরিণত হয় পাঁচুয়ার শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্মস্থান জব্বার নগরে। এখানে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত হয় অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। তবে দু:খজনক বিষয় ৪ হাজারেরও বেশী বই সংগ্রহ নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা গ্রন্থাগার ও জাদুঘর কোলাহলশূণ্য অলস হয়ে পড়ে আছে। বিশাল হল রুমে চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায় কিছু দর্শনার্থী। ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।
শহীদ জব্বারের জন্মভিটার পাশে ৪০ শতক জায়গার উপর নির্মিত ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর । আলমারিতে শোভা পাচ্ছে ৪ হাজার ১৭১টি বই। অনেক দামি ও দুর্লভ বই রয়েছে। পুরো জাদুঘর গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আগে দৈনিক পত্রিকা রাখা হলেও এখন আর দৈনিক পত্রিকার রাখা হয় না। কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে কম্পিউটার রুমটি তালাবদ্ধ থাকে।
গ্রন্থাগার দেখাশুনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট ৫টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।
লাইব্রেরিয়ান মোঃ কায়সারুজ্জামান জানান, অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। নিয়মিতভাবেই গ্রন্থাগার খোলা হয়। ভাষার মাসে দর্শনার্থীরা এলেও বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন আসে না। তাই তাদের তেমন কোনো কাজ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠাগার ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু দর্শনার্থী আসছেন, তারা আশপাশ ঘুরে দেখলেও গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বই পাঠ করছে না। জাদুঘরের সামনে, শহীদ মিনার কিংবা ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঝোঁক বেশী তাদের। পৌর এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক সালাহউদ্দিন সহ আরো অনেকেই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি এখানে নেই। শহীদ আব্দুল জব্বারের উত্তরসূরীরা এখানে কেউ থাকে না বলে তাদের কারো সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই। নারী উদ্যোক্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, উপজেলা সদর থেকে সরাসরি যানবাহন না থাকায় আসা যাওয়া করতে পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এর বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। কলেজ শিক্ষার্থী রিজওয়ান শাবাব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীসহ গফরগাঁওবাসীর দাবী ছিল আমাদের গর্ব, গফরগাঁওয়ের গর্ব ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে গফরগাঁও একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হউক।
গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিকুর রহমান বলেন, অনেক আন্দোলন করে এবং কয়েকবছর স্থানীয় লোকজন নিয়ে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদ দিবস উদযাপন করার পর ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের বাড়ীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি যে ভাবে পাঠকরা আকৃষ্ট হয় সেই পরিকল্পনা নেওয়া, দ্রুত এলাকার নামকরণ জব্বার নগর গেজেটে অন্তভুক্ত করা এবং ভাষা শহীদের নামে শহীদ আবদুল জব্বার কারিগরি কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল স্থাপন করা হোক।
ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদার জানান, ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটির সংস্কার চলছে। বাকি সংস্কারের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা।