ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিকাশ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ

ঘরে বসে অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে দেশের বহু বেকার তরুণ-তরুণীর অর্থকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এরা এতটাই বেপরোয়া যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মাঝেও নানা কৌশলে সক্রিয় রয়েছে। মোবাইল ফোনে এসএমএসে ঘরে বসে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রস্তাব দিয়ে পাঠানো হয় একটি লিংক। তাতে লাইক-কমেন্ট করলেই অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয় কিছু টাকাও। পরে দ্বিগুণ লাভসহ আসে বিনিয়োগের প্রস্তাব। এসব প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন বহু তরুণ-তরুণী।
  • আপলোড তারিখঃ 09-03-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 118907 জন
বিকাশ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ ছবির ক্যাপশন: প্রতিকী ছবি
ad728

  আজিজুল ইসলাম,  ফরিদপুর : 

ঘরে বসে অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে দেশের বহু বেকার তরুণ-তরুণীর অর্থকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এরা এতটাই বেপরোয়া যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মাঝেও নানা কৌশলে সক্রিয় রয়েছে।   মোবাইল ফোনে এসএমএসে ঘরে বসে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রস্তাব দিয়ে পাঠানো হয় একটি লিংক। তাতে লাইক-কমেন্ট করলেই অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয় কিছু টাকাও। পরে দ্বিগুণ লাভসহ আসে বিনিয়োগের প্রস্তাব।   এসব প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন বহু তরুণ-তরুণী।

আজমীর কাকলি নামে পুরান ঢাকার এক তরুণী অনলাইনে উপার্জনের চেষ্টা করছিলেন। সম্প্রতি ভাইবার অ্যাপের মাধ্যমে শহিদুল ইসলাম নামে একজন তাকে ফোন করে ঘরে বসে অনলাইনে কাজের প্রস্তাব দেন। এরপর তার মোবাইলে এসএমএস আসে তিনি ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।   তার অ্যাকাউন্টে দুই হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। এ টাকা তুলতে প্রথমে সিকিউরিটি মানি এবং ট্যাক্সের সার্ভিস চার্জ বাবদ তিন হাজার টাকা জমা দিতে হবে। এতে তিনি রাজি হন। এরপর শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস অর্জনের জন্য অনলাইনে তাকে আরও কিছু কাজ করতে দেওয়া হয়।  এর সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতারকের বিকাশ নম্বরে ৬ হাজার টাকা পাঠান। পরদিন প্রতারকরা তাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে এবং আরও বেশি টাকার কাজের জন্য সিকিউরিটি মানি বাবদ টাকা দিতে বলে। ‘যত বেশি বিনিয়োগ-ততবেশি লাভ’ এমন প্রস্তাবে তাদের বিকাশ নম্বরে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬ টাকা পাঠান নুসরাত। পরে প্রতারকরা আরও টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতকে টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়।   এ মামলায় সম্প্রতি মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে শহিদুল নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট-এটিইউ। সাইদুর জানিয়েছেন, বহু তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে এভাবে টাকা-পয়সা হাতিয়েছেন তিনি। এছাড়া মিরপুরের ভাষানটেক এলাকার  আলম তপু একই কায়দায় প্রতারণার শিকার হন। তার কাছ থেকে ধাপে ধাপে ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় মামলা হলে এটিইউ খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে।   জিজ্ঞাসাবাদে মোয়াজ্জেম জানান, তিনি ৩ বছর ধরে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি মাসে ডিএমপির সিটিটিসি এবং পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে এভাবে প্রতারণার শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরাও পড়ছেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।   এরপরও দমানো যাচ্ছে না চক্রের তৎপরতা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি ‘টেলিগ্রাম স্ক্যাম’। চীনা প্রতারকরা এটি চালায়। বেশ কয়েকটি দেশে তারা এমন প্রতারণা করছে। বাংলাদেশে এজেন্ট হিসাবে চক্রটির প্রতারণায় সহায়তা করছে এ দেশেরই কিছু প্রতারক। চক্রটির মূল কার্যালয় দুবাইয়েও কিছু বাংলাদেশি কাজ করেন। পুলিশ এ চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।  সূত্র জানিয়েছে, প্রতারকদের প্রস্তাবে রাজি হলে মানুষকে টেলিগ্রাম গ্রুপে ঢুকতে বলা হয়। চক্রের কথামতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা দিলে অতিরিক্ত মুনাফার লোভেও অনেকে বেশি টাকা বিনিয়োগ করেন। পুলিশ সূত্র বলছে, টেলিগ্রাম অ্যাপের সঙ্গে নামে মিল থাকা টেলিগ্রাম স্ক্যামে ভয়েস কল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে।  ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘরে বসে চাকরির নামে হাতিয়ে নেওয়া অর্থকড়ি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই দেশটিতে। সম্প্রতি ডিবির হাতে চক্রের চার এজেন্ট গ্রেফতার হলে তারা এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

গফরগাঁওয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে বিএনপির বিজয় মিছিল ও সমাবেশ