মো. নজরুল ইসলাম:
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম। যেদিকে চোখ যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ছেয়ে আছে অবারিত সবুজ ফসলের মাঠ। আর এই সবুজ মাঠে সোনালী ধানের শীষে রোদের ঝিকিমিকি আলোয় বাতাসের সাথে দুলছে হাওরের লাখো কৃষকের স্বপ্ন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার অষ্টগ্রাম হাওরে ২৪,১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের এসব বোরো জমিতে সোনালী রং (আধা পাকা) ধারণ করেছে ধানের শীষ। আর ক’দিন পরেই শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। তবে আগাম জাতের কিছু ধান ইতিমধ্যে কাটা শুরু হয়েছে।
শ্রমিক স্বল্পতা, প্রচন্ড খড়ায় দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় এবার ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে অন্য বছরের চাইতে দ্বিগুন। গোলায় ধান তোলার স্বপ্ন নিয়ে এখন চলছে ধান কাটার প্রস্তুতি। ধান কাটার পূর্ব মূহুর্তে চলছে ধান মওজুদ রাখার গোলা ও ধান মারাই করার খলা প্রস্তুতির কাজ। ধান কাটার এই সময়টাতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্ভাবনা থাকায় দুশ্চিন্তাও কম হচ্ছেনা কৃষকের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ হাওরে বোরো ধানের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করছে লাখো কৃষকের স্বপ্ন । দামাল ছেলের মতো ধানের শীষে খেলা করছে দখিনা হাওয়া। চারদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। নতুন ফসল ঘরে উঠবে এমন আশায় কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে এক অনাবিল আনন্দ।
কাস্তুলের কৃষক খেলু মিয়া জানান, আমাদের বোরো ধানের চাষ খুবই ঝুকিপূর্ণ। অনেকটা জুয়া খেলার মতো। ভালো ফসল ফলার পরেও ধান কেটে ঘরে আনার পূর্ব পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতে হয় আমাদের। যে কোন সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন, অতিবৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি, অতিরিক্ত বাতাস ও আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত যদি কোন সমস্যা না হয় তবে ভালো ফলন আশা করা যায়।
কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, দুই একর জমি করতে আমার প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। রবিবার রাতে প্রচন্ড বাতাসে প্রায় অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া ফসল উঠার পর সংরক্ষণের জায়গার অভাবে কমদামে ধান বিক্রি করে দিতে হয়। তাই তিনি হাওরে সরকারি ভাবে একটি ফসল সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবী জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অভিজিত সরকার এ প্রতিনিধিকে জানান, হাওরে এখনো পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়নি। যেসব জমিতে ৮০ ভাগ ধান পেঁকে গেছে সেসব জমির ধান দ্রুত কেটে নিতে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকদের ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আমাদের এই পরামর্শ ও সেবা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসল নষ্ট না হলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলশাদ জাহান এ প্রতিনিধিকে জানান, আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে ইতিমধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে বাঁচতে জমির ৮০ ভাগ ধান পাকার পরেই কেটে নিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসল নষ্ট না হলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।