ঢাকা | বঙ্গাব্দ

৩৬ বছর ধরে তারা 'একঘরে' জীবনে

বাজারের একটি দোকানে এক কেনায় নিরিবিলি বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন ৭০ বছর বয়সী ধনঞ্জয় দাস। চা পান শেষে অনেকটা মাথা নিচু করেই তিনি হাঁটা শুরু করলেন বাড়ির দিকে। যাওয়ার পথে কারো সঙ্গে নেই তার কথা। কেউ তার দিকে একবারে জন্য তাকালেনও না। কিন্তু কেন?
  • আপলোড তারিখঃ 18-09-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 3106 জন
৩৬ বছর ধরে তারা 'একঘরে' জীবনে ছবির ক্যাপশন: ধনঞ্জয় দাস ও শ্রীমতি রানী দাস
ad728



মো. কামরুল ইসলাম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:

বাজারের একটি দোকানে এক কেনায় নিরিবিলি বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন ৭০ বছর বয়সী ধনঞ্জয় দাস।  চা পান শেষে অনেকটা মাথা নিচু করেই তিনি হাঁটা শুরু করলেন বাড়ির দিকে। যাওয়ার পথে কারো সঙ্গে নেই তার কথা। কেউ তার দিকে একবারে জন্য তাকালেনও না। কিন্তু কেন?


এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ৩৬ বছর আগের কথা টেনে বৃদ্ধ ধনঞ্জয় বললেন, ‘পছন্দের মানুষকে বিয়ে করা কী অপরাধ?’ তবে শেষ বিদায়টা তিনি প্রতিবেশীর কাঁধে করেই যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন।


বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার ভোলাচং এলাকার ধনঞ্জয় দাস ও শ্রীমতি রানী দাস দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ শতক জমির একতলা বাড়িতে দম্পতি নিঃসঙ্গভাবে বসে আছেন। কথা হলে ৩৬ বছরের দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন।


ধনঞ্জয় বলেন, ‘৩৬ বছর ধরে সমাজপতিরা আমাদের একঘরে রেখেছিল। তার ভাষ্য, আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম স্ত্রী বিহঙ্গী রানী দাস এক কন্যা সন্তান নিয়ে চলে যান। পরে তিনি প্রতিবেশী শ্রীমতি রানী দাসের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।


শ্রীমতি রানী তখন তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা এবং অনিল চন্দ্র দাসের স্ত্রী। ১৯৮৯ সালে তিনি স্বামী ও সন্তানদের ছেড়ে ধনঞ্জয়কে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই দাসপাড়ার তৎকালীন সমাজপতিরা তাদের একঘরে রাখেন।

শ্রীমতি রানী বলেন, ‘স্বামী ও সন্তান রেখে নতুন করে বিয়ে করায় পাড়ার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলত না, বাড়িতে আসত না।এলাকার সামাজিক আয়োজনে তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয় না।


স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ৩৬ বছর আগে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। এরপর প্রতিবেশি বধূ শ্রীমতিকে তিনি বিয়ে করেন। চার সন্তান রেখে ধনঞ্জয়ের কাছে চলে আসেন শ্রীমতি। এরপরই গ্রামের মুরুব্বিরা ওই দম্পতিকে একঘরে করেন।


ধনঞ্জয়ের বাড়িতে থাকা রামু দাস বলেন, ‘আমরা এখানে আছি ৬-৭ বছর ধরে। আমরাও চাই বিষয়টি মীমাংসা হোক।’


ভোলাচং নতুন বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। আমার কাছে খুব খারাপ লাগলো। এটা অমানবিক। আমি তাদের এলাকার লোকজন বলেছি যেন দ্রুত সমাধান করে দেন।’

ভোলাচং দাসপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি সুভাস দাস বলেন, ‘অনেক আগে মুরুব্বিরা একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এখন বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি সমাধান হবে। আমরাও চাই সবাই মিলেমিশে চলতে।’

ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) অঞ্জনা রানী সাহা বলেন, 'বিষয়টি আজ ফেসবুকে আমি দেখেছি। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে কোন দম্পতিকে ৩৬ বছর একঘরে করে রাখবে সমাজপতিরা, এটা কি ভাবা যায়? এতো অকল্পনীয়। আমরাতো এটা ভাবতেই পারছিনা। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা বিষয়টির তাই দ্রুত সুষ্ঠু মিমাংসা চাই।'


প্রণব দাস নামে একজন বলেন, ‘বিষয়টিকে একঘরে করে রাখা বলা যাবে না। ধনঞ্জয় দাসের মা মারা যাওয়ার পর তো আমরা সবাই মিলে সৎকারে গেছি। তবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে। 


বর্তমান সমাজপতি সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘তৎকালীন মুরব্বিরা সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা   ধনঞ্জয় ও শ্রীমতিকে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে  ভাবছি।


নবীনগর পৌরসভার প্রশাসক এর দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড খালিদ বিন মনসুর বলেন, 'পৌরসভার ভেতরে এমন ঘটনা শুনে হতবাক হয়েছি। বর্তমান জামানায় কোন দম্পতিকে এমনভাবে একঘরে রাখার কোন সুযোগই নেই। বিষয়টি মিডিয়ার কল্যাণে জেলা প্রশাসক মহোদয় জেনে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা শীগগিরই দাস পাড়ার সমাজপতিদের ডেকে এ বিষয়ে প্রযোজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা নেবো।'


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

পানছড়িতে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ (মূল) এর মধ্যে গুলিবিনিময়, অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার।