অধ্যাপক শেখ কামাল উদ্দিন:
কসবায় ভুল চিকিৎসায় শাকিবা আক্তার (২০) নামে এক প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার বিকেলে পৌর শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত জমজম হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শাকিবা আক্তার উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের তিনলাখপীর এলাকার বাচ্চু মিয়ার মেয়ে ও পৌর শহরের গংগানগর গ্রামের অহিদ মিয়ার ছেলে সাদেক হোসেনের স্ত্রী। প্রসুতির মৃত্যু টেরপেয়ে সটকে পড়ে হাসপাতালের লোকজন। এ ঘটনায় হাসপাতালে ভাংচুর চালায় মৃত প্রসুতির স্বজন ও স্থানীয় জনতা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রসুতির স্বামী সাদেক হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্ত্রী শাকিবা আক্তারকে নিয়ে আসেন পৌর শহরের নতুন বাজারে মডেল মসজিদের পাশেই অবস্থিত জমজম হাসাপাতাল নামে বেসরকারী হাসপাতালে। বাড়ি থেকে আসার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলো শাকিবা আক্তার। হাসপাতালে আনার পরে চিকিৎসকের নির্দেশনায় তাকে প্রায় ৮টি শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক সিজার করানো যাবে বলে জানায় সাদেক হোসেন ও তার বাবা-মাকে। চিকিৎসকের কথা শুনে আস্বস্ত হয় সাদেক। পরে দুপুর আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে ওটিতে নেয়া হয়ে শাকিবাকে। সুস্থভাবে হাসিমুখে হেঁটেই ওটিতে যায় প্রসুতি শাকিবা। কিছুক্ষণ পরে তার একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। নবজাতক কন্যাকে তাকে দেখানো হলে মেয়ের কপালে চুমু দেয় শাকিবা। নবজাতকের দেয়া হয় স্বজনদের কাছে। ওইদিকে ওটিতে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে শাকিবার শরীর। শরীর কেমন ফ্যাকাশে হতে থাকে। অপারেশনের আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রসুতি শাকিবার দেহ নিথর হয়ে যায়। শাকিবার নিথর ফ্যাকাশে দেহ দেখে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন সাথে থাকা স্বজনেরা । জানতে চাইলে ওটিতে থাকা দায়িত্বরতরা জানায় অজ্ঞানের ওষুধের কারণে ঘুমিয়ে আছে প্রসূতি। তাকে নেয়া হয়ে ওটি'র পাশের একটি কেবিনে। দীর্ঘক্ষণ শাকিবা নড়াচড়া না করায় আরও সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে কেবিনে গিয়ে সাদেকের বাবা অহিদ মিয়া দেখেন শাকিবা নিশ্চুপ, চেহারা ও ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাশে হয়ে আছে। নড়াচড়া না দেখে তিনি শাকিবার নাকে আঙ্গুল ধরে দেখেন শ্বাস-প্রশ্বাস নেই। তার সন্দেহ হয় শাকিবা জীবিত নেই। তখন চিকিৎসককে ডাকেন তিনি। চিকিৎসক না এসে একজন সিস্টারকে পাঠান। সিস্টার এসে প্রসুতির অবস্থা দেখে চিকিৎসককে ডাকেন। চিকিৎসক এসে প্রসুতির বুকে কয়েকবার চাপ দেন কিন্তু কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে চিকিৎসক বুঝতে না দিয়ে সটকে পড়েন। ততক্ষণে প্রসুতির শ্বশুর টেরপেয়ে গেছেন যে শাকিবা মারা গেছে। প্রসুতির স্বজনরা কান্নাকাটি শুরু করে বলতে থাকেন ভুল চিকিৎসায় শাকিবাকে মেরে ফেলেছে। স্বজনদের চিৎকারে সাদেক হোসেনসহ অন্য স্বজনরা কেবিনে যায় এবং কান্নাকাটি শুরু করে। বিষয়টি টের পেয়ে চুপচাপ কেটে পড়ে হাসপাতালের লোকজন। হাসপাতালের লোকজন খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি বিকেল পর্যন্ত গড়ায়। বিকেল ৫টার দিকে উত্তেজিত স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ভাংচুর চালায় হাসপাতালে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে প্রসুতির লাশ উদ্ধার করে।
নিহত প্রসুতির বাবা বাচ্চু মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এরা আমার সুস্থ মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে। তিনি চিকিৎসকসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও এইসব হাসপাতাল নামের কসাইখানাগুলোকে বন্ধের দাবী জানান।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।