ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রতিকার

স্তন' নারীদেহের এক অনুপম সৌন্দর্য যাহা মানুষের যৌন প্রবৃত্তির (Sexual Propensity) ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক একটি অঙ্গ। শুধু যৌনতার ক্ষেত্রেই বা বলি কেন, উপরন্ত মানব শিশুর জন্মের পরে তার শারিরীক ও মানসিক ক্রমোন্নতীর জন্য খাদ্য উৎপন্ন ও প্রদানের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নারীর স্তন। অথচ নারীদের এই স্তনেই মনের অজান্তে নীরবে বাসা বাঁথে এক ভয়ংকর প্রাণঘাতী কর্কটরোগ রোগ যাকে বলা হয় "ব্রেস্ট ক্যান্সার।"
  • আপলোড তারিখঃ 29-10-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 7307 জন
ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রতিকার ছবির ক্যাপশন: প্রতিকী ছবি
ad728

ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রতিকার


ডা. হাসিবা ইসলাম সুচিত্রা:

'স্তন' নারীদেহের এক অনুপম সৌন্দর্য যাহা মানুষের যৌন প্রবৃত্তির (Sexual Propensity) ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক একটি অঙ্গ। শুধু যৌনতার ক্ষেত্রেই বা বলি কেন, উপরন্ত মানব শিশুর জন্মের পরে তার শারিরীক ও মানসিক ক্রমোন্নতীর জন্য খাদ্য উৎপন্ন ও প্রদানের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নারীর স্তন। অথচ নারীদের এই স্তনেই মনের অজান্তে নীরবে বাসা বাঁথে এক ভয়ংকর প্রাণঘাতী কর্কটরোগ রোগ যাকে বলা হয় "ব্রেস্ট ক্যান্সার।"

আসুন আমাদের অবসরে সেই প্রাণঘাতী রোগ ও তার চিকিৎসা বিষয়ে একটু ধারণা লাভ করি।


ব্রেস্ট ক্যান্সার (Adenocarcinoma) কি: 


ইহার ফলে নারীদের স্তন-কোষ-পিন্ড (neoplasm) অতিসংক্রমিত (malignant) হয়ে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হয়। আমেরিকার মতন উন্নত দেশেই প্রতি বছর দুই লাখের বেশি নারী আক্রান্ত হয় ব্রেস্ট ক্যান্সারে যার মধ্যে চল্লিশ হাজারের মতো রোগী এই রোগে মারা যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারে প্রথমত স্তন অতিরিক্ত ভার হয়ে যায়; স্তনবৃন্ত বসে বা চুপসে যায় এবং সেখান হতে কখনো রক্ত বর্ণের, কখনো বাদামী বর্ণের ঘন তরল পদার্থ (Serous) নির্গত হয়; স্তনের ত্বকে এলোমেলো ও সামঞ্জস্যহীন ভাঁজ পড়ে, খাঁজ খাঁজ অসামঞ্জস্যপূর্ণ গর্ত হওয়া ও ফুলে যাওয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী নিজেই ঐসব বিষয় পরীক্ষা করে ব্রেস্ট ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ক্যান্সারের অবস্থান নির্ণয় করা হয় ম্যামোগ্রাফির মাধ্যমে। উহা ব্যতীত বিভিন্ন প্রকার প্যাথলজিকাল পরীক্ষার মাধ্যমেও এই রোগ নির্ণয় করা হয়। স্তনে যেখানে বা যে রুপ ক্যান্সার আক্রন্ত হয় তাহা হলো স্তনের দুগ্ধবাহি টুউবে (ductal carcinoma), স্তনের ভিতরে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্লান্ডে (lobular carcinoma) এবং সমগ্র স্তনে মারাত্মক জ্বালাপোড়া জাতীয় ক্যান্সার (inflammatory carcinoma)। 


ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য চিহ্নিত ঝুকিপূর্ণ কিছু বিষয় সমূহ (Selected Risk Factor) :

** ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ইতিহাস যেমন, মা, বোন, কণ্যা, দুই বা ততোধিক নিকট আত্নীয়ের মধ্য যদি কারো ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।

** বয়স অর্থাৎ যে সকল নারী ৩০ বছর বয়সের পরে সন্তান জন্ম দিয়েছে এবং যারা আদও সন্তান জন্ম দেয় নাই।

** যে সকল নারীদের ঋতু বা মাসিক ক্রিয়া ১২ বছর বয়সের আগে শুরু হয়েছিলো তাদের উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

** বর্ণ (Race)- কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়, কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যু হার বেশি। উল্লেখ্য যে এই রোগের ঝুঁকি স্প্যানিশ ও এশিয়ার নারীদের মাঝে তুলনামূলক ভাবে কম।

** যে সকল নারীরা জন্মনিরোধক পিল সেবন করে এবং যারা হরমোন পুঃনস্থাপন থেরাপি (HRT) গ্রহণ করেছে তাদের এই রোগের স্বল্প ঝুঁকি থাকে।

** নারীদের অতিরিক্ত স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া এবং এলকাহোল সেবনের জন্য ব্রেস্ট ক্যান্সারে ঝুঁকি থাকে।


রোগ নির্ণয় (Diagnosis) :

স্বউদ্যোগে নিয়মিত পরীক্ষা, পেশাদারী পরীক্ষা এবং ম্যামোগ্রাফি হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ী পরীক্ষার চাবিকাঠি। একজন রোগীর বিশেষ করে যুবতী রোগীর ক্ষেত্রে অতিসংক্রামক ক্ষতের চেয়ে ঐ সকল পরীক্ষা অনেক অসংক্রমিত ক্ষত চিহ্নিত করে। ম্যমগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকৃত ৭৫% ক্ষতই অসংক্রমিত। প্রায় ১৫% ক্ষেত্রে উপযুক্ত ম্যামগ্রাফি ক্ষত সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় যাহা সত্যই অতি সংক্রমিত। যদি কখনো স্তনে সন্দেহজনক টিউমার সনাক্ত হয়, উক্ত টিউমার কর্তনের পর উহার কেদ্রস্থল বা মূল অংশের Biopsy বা কোষ পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে। বায়োপসি করার পূর্বে টিউমারের কাঠিন্য বা পুঁজকোষ (Cyst) আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে পরীক্ষা করা বাঞ্চনীয়। কারন সিস্টের চেয়ে শক্ত টিউমার অসংক্রমিত অবস্থা হতে অতিসংক্রমিত অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা থাকে।


ব্রেস্ট ক্যান্সারের ধাপ (Staging) :

টিউমারের আকৃতি এবং উহার সম্ভাব্য বিস্তার যেমন বক্ষ প্রাচীর, ত্বক, বগল বা দুরবর্তী কোন স্থানে এইসব কিছুই নির্ধারণ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ধাপ বা পর্যায়। ব্রেস্ট কান্সার সার্জারীর সময় ব্রেস্টের দুগ্ধবাহী নালী বা লসিকানালীর এবং নালীগুলোর সংযোগ স্থলে টিউমারের স্থানান্তর সনাক্তে, থ্যারাপি পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং রোগের আরোগ্য সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণে লসিকানালীর অংকিত চিত্র (Mapping) ব্যবহার করা যেতে পারে।


চিকিৎসা (Treatment) :

ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মাসিক বা ঋতুস্রাব এবং ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া অবস্থার উপর নির্ভর করে অনেক রোগীকে সার্জারী, রশ্মি বিচ্ছুরণ (Radiation) এবং ঔষধ থেরাপির সমন্বিত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ক্যান্সারের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের রোগীদের সার্জিক্যাল ব্যবচ্ছেদের (Operation) মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ (Mastectomy) অথবা স্তনে সৃষ্ট ক্যান্সার কোষবাহী পিন্ড (Tumour) অপসারণ (Lumpectomy) করা হয়, যদি না উভয় পদ্ধতিতে রোগীর কোন প্রতিলক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। মাসিক বা ঋতু স্রাব বন্ধ হওয়া পূর্ব অবস্থার রোগী যাদের টিউমারের আকৃতি এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড়, তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী রাসায়নিক মিশ্রপ্রয়োগ চিকিৎসা (Chemotherapy) ক্যান্সার নিবারণ দীর্ঘায়িত করে। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাধারণত যে ক্যামোথেরাপিউটিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাহা CMF (সাইক্লোফসফামাইড, মেথট্রেক্সেট এবং ফ্লোরাসিল) অথবা CA (সাইক্লোফসফামাইড এবং ডক্সোরুবিসিন [এড্রিয়ামাইসিন]) কে সংযুক্ত করে। ঋতু বা রজঃশ্রাব বন্ধ হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের ক্যান্সার স্তনের দুগ্ধ বাহি নালী ও নালীগ্রন্থী ছাড়াইয়া বগল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তাদেরকেউ একই কেমোথেরাপিউটিক চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। হরমনিয় চিকিৎসা যেমন ট্যামোক্সিফেন জাতীয় ঔষধ খুবই উপকারী বিশেষকরে যে সব বয়স্কা রোগী কেমোথেরাপিউটিক চিকিৎসার তীব্রতা সহ্য করতে পারে না। যে সকল রোগীর স্তন সার্জারীর মাধ্যমে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কর্তন করা হয় তাদের অনেকেই পরবর্তীতে কসমেটিক সার্জারীর মাধ্যমে পেটের মাংসপেশি হতে জন্মানো টিসুর দ্বারা স্তন পুনঃস্থাপন করতে পছন্দ করে। চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারপুনরায় হতে পারে আর যদি পুনরুদিত হয়, সেই ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার ক্যামোথেরাপি প্রয়োগ করা হয় এবং শরীরের প্রান্তস্থ কোন অংশ হতে কোষ নিয়ে তাহা ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে স্থাপন (Transplantation) করা হয়, যদিও ইহার গুণাগুণ এখনো অপ্রমাণিত।। 

        


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ ADMIN

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

আমি দলে কোন্দল দেখতে চাইনা, যদি কারও কোন্দলে দল ভোট কম পায়, তাকে ক্ষমা করা হবেনা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. ফজলুর রহমান